শ্রম অধিকার নিশ্চিত ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের ২২৫টি তৈরি পোশাক কারখানা আগামী জুনের মধ্যে বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষায়িত শাখা আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) পরিচালিত এই কর্মসূচির অধীনে বর্তমানে ৯৮টি পোশাক কারখানা আছে।
বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, জর্ডান, হাইতি ও নিকারাগুয়া—এই সাতটি দেশে বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এই কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া ছাড়া অন্য পাঁচটি দেশের পোশাক কারখানার কী উন্নতি হয়েছে, সে বিষয়ে গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে (বাংলাদেশ সময় রাত আটটা) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার আগে গতকাল দুপুরে রাজধানী ঢাকায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লুইস বি ভেনগেস। এ সময় তিনি বাংলাদেশে পরিচালিত কর্মসূচিটির বিষয়েও বিভিন্ন কথা বলেন।
বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা, মান ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং কারখানার ভেতরের কাজের পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে এই বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এইচঅ্যান্ডএম, পিভিএইচ, নেক্সট, ইউনিক্লো, পুমা, লি অ্যান্ড ফাং, নাইকিসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ড এই কর্মসূচির অংশীদার হিসেবে আছে।
লুইস বি ভেনগেস বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স এবং সরকারের উদ্যোগে কারখানার বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত পরিদর্শন চলছে। অন্যদিকে, বেটার ওয়ার্কের কার্যক্রমের মাধ্যমে কারখানাগুলোর সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানাই ক্রেতাদের চাপে পড়ে বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। বর্তমানে কর্মসূচির অধীনে আছে ৯৮টি কারখানা। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই সংখ্যা ২২৫-এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য আছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এই কর্মসূচির সূচনা হয়।
বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার বলেন, কর্মসূচির আওতায় শ্রম অধিকারসহ কারখানার বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন বা নিরীক্ষা করা হয়। এ জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ও ক্রেতাকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। মূল্যায়নের পরে যেসব বিষয়ে ঘাটতি আছে, সে বিষয়ে কারখানাগুলোকে উন্নতি করতে হয়। পরে সেই অগ্রগতি প্রতিবেদন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের কাছে পাঠানো হয়। কোনো কারখানা যদি উন্নতি করতে না পারে কিংবা সন্তোষজনক না হয়, তবে ক্রেতা-সংশ্লিষ্ট কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। তার মানে ক্রয়াদেশ পাবে না ওই কারখানা।
বাংলাদেশের কারখানাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে লুইস বি ভেনগেস বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব কারখানাতেই পোশাকশ্রমিকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইমের চেয়ে বেশি সময় কাজ করানো হয়। এ ছাড়া অনেক কারখানাতেই বিভিন্ন অভিযোগে শ্রমিকদের গালমন্দ করা হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েও আছে নানা ধরনের হয়রানি ও অনিয়ম।
বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের এক হাজার পোশাক কারখানার সঙ্গে কাজ করছে বেটার ওয়ার্ক। কর্মসূচির আওতায় থাকা ভিয়েতনামের ৬২ শতাংশ কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬০ শতাংশ কারখানার কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ৬৫ শতাংশ কারখানার বিক্রি বেড়েছে। অন্যদিকে, কর্মসূচির আওতায় থাকা হাইতির ৪০ শতাংশ কারখানার কাজের পরিবেশ উন্নত হয়েছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের রপ্তানি আয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।