রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় স্থবিরতার পর টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছিল। তবে জুলাই মাসে এ ক্ষেত্রে ছন্দপতন হয়েছে। জুলাইতে প্রবৃদ্ধি কমে ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এর আগে টানা এক বছরের বেশি সময় ঋণ বেড়ে গত জুনে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে উঠেছিল। মূলত বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণের অনুমোদন এবং আগে নেওয়া ঋণ সমন্বয়সহ বিভিন্ন কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে এখন প্রচুর ঋণ নিচ্ছেন। গত জুন পর্যন্ত বিদেশ থেকে স্বল্প মেয়াদে ৪৪৬ কোটি ডলারের ঋণ এসেছে। এর বাইরে গত ৬ বছরে দীর্ঘমেয়াদি প্রায় সাতশ’ কোটি ডলারের ঋণের অনুমোদন দিয়েছে বিনিয়োগ বোর্ড। এ ছাড়া মাত্র তিন মাসে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বেড়ে ৩৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। এসব ঋণও বিদেশি ঋণ হিসাবে বিবেচিত। পাশাপাশি আগে নেওয়া বড় কিছু ঋণ গত জুলাইতে সমন্বয় হয়েছে। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে সুদহার কমার ফলে সুদের হিসাবায়ন কম হওয়ায় এমন হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। গত জুলাইতে ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল।
এ বিষয়ে এনসিসি ব্যাংকের এমডি গোলাম হাফিজ আহমেদ সমকালকে বলেন, সাময়িকভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে দেখা গেলেও ঋণ চাহিদা বজায় আছে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিতরণ হওয়া ঋণের বড় একটি অংশ হয়তো গত জুলাইতে সমন্বয় হয়েছে। এতে করে ঋণ প্রবৃদ্ধির ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। এতে করে বড় একটি সময়জুড়ে বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়ছিল খুব ধীরগতিতে। তখন কোনো মাসে প্রবৃদ্ধি বাড়লে পরের মাসে কমেছিল। তবে ২০১৫ সালের জুনের পর থেকে কোনো মাসে আর প্রবৃদ্ধি কমেনি। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গত ডিসেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। জুনে শেষে তা আরও বেড়ে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে একটি সময় অবশ্য প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল সমকালকে বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাময়িকভাবে কমলেও ঋণ বিতরণ কমেনি। বিনিয়োগ চাহিদার কারণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কম সুদের ঋণ নিচ্ছেন। প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে গত জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রাক্কলনের বিপরীতে এ পরিস্থিতি দাঁড়ায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সুদহার এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রেখে গড়ে যে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, গড় মূল্যস্ফীতির তুলনায় তা কম। গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সুদহার ওই মাসের গড় মূল্যস্ফীতির (৫.৭৭ শতাংশ) নিচে নেমে আসায় এ হিসাবে ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে এখন আর কোনো আয় পাচ্ছেন না আমানতকারীরা।