Home বাংলা নিউজ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে রপ্তানি বেড়েছে, কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে রপ্তানি বেড়েছে, কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে

exports

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ দুই মাসে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে চীন ও জাপানে। তবে রপ্তানির প্রধান গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আয় কমেছে বাংলাদেশের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে দেশের রপ্তানি আয়ে। এ বিষয়টি ছাড়াও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের যে উন্নতি হয়েছে, তাতে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের মধ্যে এ খাত নিয়ে আস্থা ফিরে এসেছে। তার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যাচ্ছে রপ্তানি আয়ে। তাঁরা আরও মনে করেন, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের (ব্রেক্সিট) প্রভাব এখনো লক্ষ করা যাচ্ছে না।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই দুই মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬০ কোটি ৬১ লাখ ডলার; ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যা ছিল ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে ইইউ ভুক্ত দেশ জার্মানি আমাদের রপ্তানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গন্তব্যস্থল। জার্মানিতে জুলাই-আগস্ট মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে । ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জার্মানিতে রপ্তানি হয়েছে ৯৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যা ছিল ৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩৪ শতাংশের বেশি।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জুলাই ও আগস্ট মাসে দেশের প্রধান রপ্তানির গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়ালেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা হয়েছে ৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া রপ্তানি আয় কমেছে কানাডা ও ইতালি থেকে। তবে বাকি প্রায় সব ক্ষেত্র থেকেই রপ্তানি আয় বেড়েছে।

এই দুই মাসের যে পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে, তাতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের বিষয়টির তেমন প্রভাব পড়েনি বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই–আগস্ট মাসে যে রপ্তানিগুলো হয়, তার কাজের অর্ডার হয় আরও প্রায় তিন মাস আগে। অর্থাৎ এপ্রিল মে মাসের দিকে। আর ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত এসেছে জুনের শেষ দিকে। তাই এখনো তেমন প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। ব্রেক্সিটের প্রভাব নির্ভর করবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সামনের মাসগুলোতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তার ওপর। অর্থাৎ যদি যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান ও জনগণের আয় কমে তার প্রভাব পড়বে ক্রয়ক্ষমতার ওপর। ভোক্তা ব্যয় কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আমদানি কমবে। আর যার একটা নেতিবাচক প্রভাব আমাদের রপ্তানিতে পড়তে পারে। তবে অর্থবছর শেষেই বলা যাবে কতটুকু প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, ইইউতে থাকা অবস্থায় যুক্তরাজ্যের যে প্রবৃদ্ধি ছিল, সেই গতি হয়তো এখন কিছুটা শ্লথ হবে। তবে আমদানি না কমলে আমাদের রপ্তানিতে তার তেমন প্রভাব পড়বে না।

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, প্রথম দুই মাসে মার্কিন বাজার থেকে রপ্তানি কমলেও এতে চিন্তার কিছু নেই। বর্তমানে মার্কিন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা কম লক্ষ করা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সব দেশেরই রপ্তানি আয় কমছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, কোনো মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বাড়ছে, কোনো মাসে কমছে। তার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে মার্কিন আমদানিতেও। গত দুই বছর চীনের বাজার থেকে যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবৃদ্ধির হার সে রকম না থাকলেও বর্তমান অবস্থা চীনে আমাদের বাজার সম্প্রসারণের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করেন তিনি।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হয়েছে। এর ফলে ইউরোপের ক্রেতাদের মধ্যে আমাদের পোশাক খাত নিয়ে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির। তিনি বলেন, ক্রেতাদের মধ্যে আমাদের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে আস্থা ফেরত আসছে। তারা চায় আমাদের সঙ্গে থাকতে। তবে ব্রেক্সিটের পর আমাদের জিএসপি সুবিধার বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তবে পুরো অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কেমন হবে, তা–ই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।