রাজধানীর উত্তরায় হচ্ছে বিজিএমইএর নতুন ভবন। ১৬ নম্বর সেক্টরের ৯ বিঘা সরকারি খাস জমিতে ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিজিএমইএর একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ভবনটি ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন। এর পর থেকেই ভবনটি ভেঙে ফেলা এবং অন্য কোথাও নির্মাণ করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। যদিও বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, ভবন নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর রিভিউ আবেদন করবেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ান বাজারের বতর্মান ভবনটি সরকারের কাছ থেকে কেনা জায়গায় নির্মিত। ভবনটি ভেঙে ফেলা এবং জমি ছেড়ে দিতে হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজিএমইএ। এ বিবেচনা থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে উত্তরায় মোট জমির অর্ধেক পরিমাণ বিজিএমইএকে বিনামূল্যে দিতে রাজি হয়েছে সরকার। বাকি জমি সরকারের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে। তবে ৯ বিঘার পুরো জমিটিই বিনামূল্যে দাবি করেছে বিজিএমইএ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে বিজিএমইএর নেতাদের এক বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকে উপস্থিত বিজিএমইএর একাধিক সাবেক ও বর্তমান নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিজিএমইএর নিজস্ব কোনো তহবিল না থাকায় উত্তরার ৯ বিঘার পুরো জায়গাটিই বিনামূল্যে পাওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন তারা। কিন্তু অর্ধেকের বেশি জমি বিনামূল্যে দিতে রাজি হচ্ছে না সরকার। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে একটা সমাধানে আসা যাবে বলে মনে করেন বিজিএমইএর নেতারা।
বিজিএমইএর নেতারা বলেন, উত্তরার ৯ বিঘার প্রস্তাবিত জায়গাটিই নানা দিক থেকে উদ্যোক্তারা সুবিধাজনক মনে করছেন। বিদেশি ডেলিগেশন, কূটনীতিক, ক্রেতাদের জন্য অভিজাত এ এলাকা খুবই উপযোগী হবে। দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের কারণে কূটনীতিকপাড়া ও বিমানবন্দর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে মিটিং-সিটিং নিয়ে এখন বেশ সমস্যা হচ্ছে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা নিজেরাও সাভার, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাজ শেষ করে প্রয়োজনে সময়মতো বিজিএমইএর কার্যালয়ে আসতে সমস্যায় পড়েন। কারণ, অধিকাংশ সময় যানজট থাকে। এসব কারণে উত্তরার খাস জমিটির প্রতিই বিজিএমইএর নেতারা বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে জানান, কারওয়ান বাজার থেকে বিজিএমইএ ভবন সরাতে সরকারের কাছে সময় চাইবেন তারা। সার্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান অনস্বীকার্য। বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বিজিএমইএর আলাদা ভাব-মর্যাদা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকারের কাছে যুক্তিসঙ্গত সময় পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তারা। উত্তরায় নতুন ভবনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
দুই যুগ আগে ১৯৯২ সালে তৎকালীন পূর্ত সচিবের কাছে একখণ্ড জমির জন্য আবেদনের মাধ্যমে বিজিএমইএর নিজস্ব ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। লম্বা প্রক্রিয়া শেষে কারওয়ান বাজারের দুই বিঘা জমি পাঁচ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৫ টাকায় কিনে নেয় বিজিএমইএ। তবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ভবনের নকশা অনুমোদনের আগেই নির্মাণকাজ শুরু করায় ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেয় বিজিএমইএ। ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিজিএমইএর ভবন উদ্বোধন করেন। এর পর ১৪ তলা ভবনটি দেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। তবে ভূমির মালিকানা স্বত্ব না থাকা এবং ইমারত বিধিমালা ও জলাধার আইন ভঙ্গ করায় হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনকে অবৈধ ঘোষণা করে এটি ভেঙে ফেলার রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ। গত ২ জুন হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।