যুক্তরাজ্যে অনেকের পরনের পোশাকেই হয়তো যুদ্ধাহত ও ভাগ্যতাড়িত সিরীয় শরণার্থী শিশুর নিরলস শ্রম জড়িয়ে রয়েছে। মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার (এমঅ্যান্ডএস), আসোস, জারা, ম্যাংগো জিন্সের মতো নামকরা ব্র্যান্ডের তুর্কি কারখানায় সিরীয় শরণার্থী শিশুদের পোশাক তৈরি করতে দেখা গেছে। যদিও এমঅ্যান্ডএস দাবি করছে, তাদের তদন্তে কোনো সিরীয় শিশুকে পোশাক তৈরিরত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তবে বিবিসির অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান প্যানোরামার গোপন তদন্তে ব্রিটিশ রিটেইলারটির একটি কারখানায় সাত সিরীয় শিশুকে কাজ করতে দেখা গেছে।
বিবিসির সাংবাদিকদের তদন্তে তুরস্কে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় অপ্রাপ্তবয়স্ক সিরীয় শরণার্থীদের কাজ করতে দেখা যায়। এসব কারখানায় বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে পোশাক তৈরি করা হয়, যার বেশির ভাগই ইস্তাম্বুল শহরতলিতে অবস্থিত।
ভৌগোলিক দিক থেকে ইউরোপের কাছেই তুরস্কের অবস্থান। এর সুবিধা নিতে বর্তমানে অনেক ইউরোপীয় ব্র্যান্ডই তুর্কি কারখানায় পোশাক তৈরি করে। বর্তমানে তুরস্কে অবস্থান করছে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী। এসব শরণার্থীর কোনো বৈধ ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় তুরস্কের বিভিন্ন পোশাক কারখানা তাদের কম মজুরিতে অধিক সময় ধরে কাজ করাচ্ছে।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডই শরণার্থী কর্মী নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্র্যান্ডগুলো জানায়, তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়মিত তদারক করা হয়। তারা কোনোমতেই শরণার্থী বা শিশুদের শোষণ প্রশ্রয় দেয় না বলে দাবি করে। ব্র্যান্ডগুলো আরো জানায়, পোশাক তৈরিতে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক কোনো শরণার্থীকে দিয়ে অবৈধভাবে কাজ করিয়ে নেয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি।
এমঅ্যান্ডএসের কারখানায় যেসব শরণার্থী শিশুকে পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী কিশোরও রয়েছে। সে বিবিসিকে জানায়, তাকে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আসোস, ম্যাংগো জিন্স ও জারা ব্র্যান্ডের কারখানাগুলোতেও কম বেতনে ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে শরণার্থীরা।
এসব শরণার্থীকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পোশাক কারখানায় নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো কাঠামো মেনে চলা হয় না। এ কর্মীদের তুরস্কের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম মজুরি দেয়া হয়। একজন শরণার্থী প্যানোরামাকে জানায়, কারখানায় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। একটু পান থেকে চুন খসলেই ছাঁটাই করা হয় সিরীয় শরণার্থীদের।
ব্র্যান্ডগুলো সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে যেতে চাইলেও সমালোচকরা বলেন, তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। কীভাবে কোন পরিবেশে তাদের পোশাক তৈরি হচ্ছে, তা তদারকির দায়ভার তাদেরই। এদিকে খবরটি প্রচারের পর এমঅ্যান্ডএস ও আসোসের টনক নড়েছে। তারা শরণার্থীদের স্থায়ী বৈধ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিতেও সম্মত হয়েছে তারা।