পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশ বেড়েছে। আগের বছরের ৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে এ হার ২০১৫ সালে হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে করে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রয়েছে। তৈরি পোশাকের ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজারে বরাবরের মতো প্রধান রফতানিকারক এখনও চীন।
বাণিজ্য বিশ্লেষক ও রফতানিকারকদের মতে, বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সুযোগ বিবেচনায় এ হার যথেষ্ট নয়। তাদের মতে, চীন এ পণ্য উৎপাদন থেকে ক্রমে সরে আসছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া বাজারের শূন্যতা পূরণে বাংলাদেশই পশ্চিমা ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। এ ছাড়া এ দেশের পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক ইউরোপ ও আমেরিকার দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পক্ষে কারখানার নিরাপত্তা মান পরিদর্শনে বড় ধরনের ত্রুটি না পাওয়ায় এখানকার পোশাক খাতের প্রতি বিশ্বব্যাপী ভুল ধারণা কেটেছে। পরিদর্শনে যেসব ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তা সংস্কার হচ্ছে সফলভাবে। এ দুই সুবিধায় রফতানি আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল বলে উল্লেখ করেন তারা।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) ‘বিশ্ববাণিজ্যের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা-২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশ আগের বছরের চেয়ে দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে দীর্ঘদিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম ও ভারতের অংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা হুমকি হয়ে উঠছে। ৪ শতাংশ থেকে ভিয়েতনামের অংশ বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ৩ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ভারতের অংশ বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। তবে মৌলিক মানের তৈরি পোশাক উৎপাদন থেকে কিছুটা সরে এলেও চীনের অংশ আরও বেড়েছে। ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে এ হার বেড়ে এখন ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (টিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, তৈরি পোশাক রফতানি বাড়াতে এ দেশের সামর্থ্য আরও বেশি। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার মতে, ইপিজিডের বাইরে তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ করতে দেওয়া হয় না। অন্যান্য দেশের মতো এখানে বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে রফতানি অনেক বেশি হতে পারত। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে এখন চীনের কারখানা স্থানান্তর হচ্ছে। বাংলাদেশে এর বড় একটা অংশ আসতে পারে। চীনের জন্য স্পেশাল ইকোনমিক জোনের কাজ দ্রুত শেষ করা গেলে বিশ্ব পোশাক বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা আরও বাড়বে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমেছে ৭ শতাংশ। এ প্রবণতার মধ্যেও বাংলাদেশের অংশ বাড়ছে। এটা অবশ্যই অত্যন্ত খুশির খবর। তবে বাংলাদেশ আরও বেশি রফতানির সামর্থ্য রাখে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক দুটি জোট কারখানা সংস্কারে সহযোগিতা দিচ্ছে। তার মতে, নিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়ে উদ্যোক্তারা অনেক সতর্ক হয়েছেন। সবুজ প্রযুক্তির অনেক কারখানা গড়ে উঠছে। এসব উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের পোশাকের প্রতি বিশ্বক্রেতাদের মনোযোগ বেড়েছে। ডবি্লউটিওর আগামী প্রতিবেদনে সে প্রতিফলন দেখা যাবে মনে করেন তিনি।