আগামী ২০২১ সাল থেকে বছরে ৬০ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর অংশ হিসেবে তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাতের প্রধান পাঁচ পণ্য নিয়ে একটি পথনকশা করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর উদ্যোক্তা, গবেষকসহ সংশ্লিস্টদের সঙ্গে বৈঠক করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করা হবে। চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে উদ্যোক্তা, গবেষক ও বিশ্লেষকদের পরামর্শের ভিত্তিতে এ কাজ করা হবে।
ইপিবির এ পথ নকশা বাস্তবায়নে ব্যাবস্থা নেবে সরকার। চলতি অক্টোবরের শেষ নাগাদ পথনকশার কাজ শেষ করা হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, গত অর্থবছরের ৩৪ বিলিয়ন ডলারের আয় আগামী ৩ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বাস্তবতায় পথনকশা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আওতায় হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে বিশেষভাবে পরিচর্যা করা হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে একক বড় খাত হিসেবে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাকি সব পণ্য থেকে আসবে ১০ কোটি ডলার। বিশ্বের ১৯৮ দেশে বর্তমানে ৭৪৪ ধরনের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট আয় এসেছে ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানের দ্বিগুণ আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ রফতানিকারকদের মধ্যেই। তাদের মতে, অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও সে জন্য জোরালো প্রস্তুতি নেই। সহায়ক নীতি সহায়তাও পর্যাপ্ত নয়। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মধ্যেও রয়েছে একই সংশয়।
তবে ইপিবির প্রধান নির্বাহী ও ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি সমকালকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে প্রধান পাঁচ পণ্যের উদ্যোক্তা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসবে ইপিবি। লক্ষ্য অর্জনে কোন পণ্যের কী ধরনের বাধা রয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হবে। এই পথনকশার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পোশাক খাতের অন্যতম বড় উদ্যোক্তা তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দীপু সমকালকে বলেন, অবকাঠামো সংকটের সমাধান ও বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়ক দেওয়া না হলে কবে নাগাদ পোশাক রফতানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় আসবে তা কেউ বলতে পারবে না। বিজিএমইএর সাবেক এ পরিচালক বলেন, বিদেশি উৎস থেকে ঋণ আনার সুযোগ পাচ্ছেন বড় উদ্যোক্তারা। ক্ষুদ্র-মাঝারিরা তা পাচ্ছেন না। এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, রফতানি আয়ের বর্তমান প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বড়জোর পোশাক খাত থেকে ৪০-৪১ বিলিয়ন ডলার আয় আসতে পারে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করতে হলে বছরে অন্তত ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব অবকাঠামোর সুনির্দিষ্ট এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। সেটা করা হয়নি।