মাত্র দুই বছর আগেই অ্যারোপোস্টালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়ান গাইগার গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, বর্তমানের টিনএজাররা প্রথানুগামী হতেই চায়। তারা সেসব কিছুই পরতে চায়, যা তাদের নিরাপদ বোধ করাবে। স্কুলে যেতে বা রাস্তায় পোশাক নিয়ে কেউ বাঁকা মন্তব্য করবে না— টিনএজাররা আমাদের পোশাক পরবে, কারণ ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যারোপোস্টালের প্রতিশ্রুতি এটাই। কিন্তু মাত্র দুই বছরেই গাইগারের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ যুগের তরুণদের প্রথাবিরোধী পোশাক ভাবনা আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
একটা সময় পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো— পাছে লোকে কি বলবে। পোশাক যেন হয় ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের কোনো ‘স্বাভাবিকত্বের’ তকমায় বন্দি রাখতে আগ্রহী নয়। নির্দিষ্ট ধাঁচ-ছাচ আর নতুন প্রজন্মকে টানছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সী ফ্যাশন ব্লগার জাস্টিনা শার্প জানান, এক সময়ে প্রচলিত ব্র্যান্ড লোগো আজ তার আবেদন হারিয়েছে। ব্র্যান্ড লোগোর মধ্যে আর কোনো অভিনব কিছু খুঁজে পাচ্ছে না টিনএজাররা।
নতুন প্রজন্মের এ ভাবনা সরাসরি প্রভাব পড়ছে অ্যারোপোস্টাল, এ্যাবারকম্ববি অ্যান্ড ফিচ (এঅ্যান্ডএফ), আমেরিকান ঈগল প্রমুখ পোশাক জায়ান্টের ওপর। পরের দুটো ব্র্যান্ড ‘স্বাভাবিক’ স্টাইল আর চলছে না বুঝতে পেরে এরই মধ্যে নিজেদের অবস্থান বদল করেছে। কিন্তু বড় পতনের শিকার হয়েছে অ্যারোপোস্টাল এবং টিনএজারদের পোশাকযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে। মার্কিন শপিংমলভিত্তিক খুচরা বিক্রেতাটির দেউলিয়াত্ব গ্যাপ ও বানানা রিপাবলিকসহ অন্যান্য পোশাক বিক্রেতাদের জন্য সতর্ক ঘন্টি হয়ে উঠেছে। লক্ষণীয় হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা শুধু টিনএজারদের নয়, তাদের অভিভাবকদের গায়েও এ অভিনবত্বের হাওয়া লেগেছে।
২০১১ সালেও শীর্ষে অবস্থান করা অ্যারোপোস্টালের বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৪০ কোটি ডলার। কিন্তু হঠাত্ই সব ধসে পড়েছে। দুরন্ত টিনরা ব্র্যান্ড পোশাক পরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা বরং ভিড় জমাচ্ছে ফরএভার ২১ এবং এইচঅ্যান্ডএমের মতো বাজার-কাটতি পোশাকের দোকানগুলোয়। একদিকে টিনএজাররা আর ব্র্যান্ড পোশাক পরতে চায় না অথচ সেটা ছাড়া নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে অ্যারোপোস্টাল। ব্লগার শার্প বলেন, অ্যারোপোস্টাল মানে যেন তোমার মা তোমাকে স্কুলের পোশাক কিনে দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। এ হাওয়ায় এঅ্যান্ডএফ এবং আমেরিকান ঈগলরা যেখানে নিজেদের তরী ভাসিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছে, সেখানে অ্যারোপোস্টালের তরী ডুবতে বসেছে। পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ বিক্রি কমেছে প্রতিষ্ঠানটির।
তবে উদ্ধার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। ডেনিমে মনোযোগ সরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছে আমেরিকান ঈগল। এরই মধ্যে তরুণদের অন্যতম পছন্দ জিনসের মাধ্যমে নিজেদের নতুন অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে পুরনো গ্রাহকদের টানতে নিজেদের পোশাকে অত্যাধুনিকতার মিশেল ঘটাচ্ছে এঅ্যান্ডএফ। একইভাবে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে পথ খুঁজছে অ্যারোপোস্টাল।