বাংলাদেশ ও চীনের ২৬টি কোম্পানির মধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার ৫২৯ কোটি টাকার (১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার) বিনিয়োগ চুক্তি সই হয়েছে। দুই দেশের কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ, নির্মাণ, যোগাযোগসহ অবকাঠামো খাতের ১৩টি প্রকল্পে এই বিনিয়োগ করবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস ফোরামের যৌথ বৈঠকে এসব চুক্তি সই হয়। এ সময় বিভিন্ন খাতে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চীনের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ভালো পরিবেশ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) যৌথভাবে এ ব্যবসায় সম্মেলনের আয়োজন করে।
চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না ও হুবেই হংওয়ান পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডসহ ১৩ কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো, ওরিয়ন, মেঘনা, রুরাল পাওয়ার কোম্পানিসহ ১১টি বেসরকারি খাতের কোম্পানি ও ২টি সরকারি সংস্থার মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে যে বিনিয়োগ হবে তার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রায় সমান। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগই হবে বিদ্যুৎ খাতে। বেক্সিমকো, ওরিয়ন, মেঘনা ও রুরাল পাওয়ার কোম্পানি যে চুক্তি করেছে তা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন ও বিতরণে বিনিয়োগ হবে। এ ছাড়া কক্সবাজারে একটি স্টেডিয়াম, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদীর মধ্যে রেলের ডাবল লাইন স্থাপন ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ করবে অন্যান্য কোম্পানি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন এই চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট, ওষুধ, সিরামিক, লেদার, জাহাজ নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ি, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এসব খাতে চীনের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলাদাভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদার নীতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আকর্ষণীয় সুবিধা দিচ্ছে।
শতভাগ মূলধন বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। চীনের উদ্যোক্তারা এসব সুবিধা নিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামে স্থাপিত হতে যাচ্ছে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অঞ্চলে দেশটির উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এসব বিনিয়োগ হলে উভয় দেশ লাভবান হবে। তিনি বলেন, গত তিন মাসে চীনে পণ্য রফতানি ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন থেকে চার বছরে ২০০ কোটি ডলারের রফতানি ছাড়িয়ে যাবে। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এখন ১৩টি চুক্তি হলেও পরে এ সংখ্যা বেড়ে ৫০টির বেশি কোম্পানির মধ্যে চুক্তি হবে। চীনের ব্যবসায়ীরা এ দেশে বিনিয়োগ করলে নিশ্চিত লাভবান হবেন। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) ও সিল্ক রুটের আওতায় সুবিধা নিতে চীনের উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানান তিনি।
সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝহু বলেছেন, চীনের উদ্যোক্তারা আস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবেন। এ দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ভালো পরিবেশ রয়েছে। এ কারণেই তার দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী। এই মুহূর্তে যেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশ সফর করছেন তাদের অনেকে এ দেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে চান। বিশেষ করে চামড়া, অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনে রফতানি করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, এ দেশের জ্বালানি খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চান। চীনের প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চান। এফবিসিসিআই ও সিসিপিআইটির মাধ্যমে যে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে তা উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনায় কাজে লাগাতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির ও অ্যাপিলিয়ন গ্রুপের রেজাউল কবির বাংলাদেশের ওষুধ ও পোশাক খাতের চিত্র তুলে ধরেন। চীনের পক্ষ থেকে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং জু শেং ও টিবিয়ান ইলেকট্রিক অপারেটর কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ঝাওয়াংশি তার দেশের যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ খাতের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী ৮৬ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।