তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের কারখানার নিরাপত্তা মান ও সংখ্যা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পোশাক কারখানার মতো অন্যান্য শিল্প-কারখানাকেও নিরাপদ করতে নতুন করে পরিদর্শনের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কার্যকর পরিদর্শন কৌশল নির্ধারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনা (এনটিপিএ) এবং বাংলাদেশের পোশাক খাতে সংস্কারবিষয়ক দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শন করা পোশাক কারখানায় নতুন করে আর পরিদর্শন করা হবে না।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) মান যাচাইয়ের এ কাজ করবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে টাম্পাকো প্যাকেজিং কারখানায় গ্যাস বিস্ফোরণের পর সারাদেশের সব কারখানার দাহ্য পদার্থের নিরাপদ ব্যবহারসহ ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই দুর্ঘটনায় ২৪ শ্রমিক দগ্ধ হয়ে মারা যান। গুরুতর আহত হন অন্তত ৩০ শ্রমিক।
জানতে চাইলে ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, নতুন পরিদর্শনে কারখানার শ্রেণি নির্ধারণ, ভবনের কাঠামো এবং অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান যাচাই করা হবে। আইএলওর নেতৃত্বে কয়েকটি দাতা সংস্থা ডিজিটালাইজড পদ্ধতি পরিদর্শনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ডিসেম্বর নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। টঙ্গীর টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণের পর এক ধরনের উদ্বেগ থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি জানান, সংস্থার নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমকেও কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে সব কার্যক্রম।
ডিআইএফই বাড়তি পরিদর্শকের জন্য দুই হাজার ২৭১ জন লোকবল নিয়োগের চাহিদা জানিয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ডিআইএফই সূত্রে আরও জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী এবং ছোট-বড় মিলে ৮০ লাখের মতো প্রতিষ্ঠান আছে। তবে সব প্রতিষ্ঠান ডিআইএফইর নজরদারিতে নেই। নতুন পরিদর্শনে কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ডিআইএফইর নজরদারিতে আসতে পারে তাও যাচাই করা হবে। বিশেষ করে বয়লার, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, রাবার ও ফার্নেস ওয়েল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে, এমন কারখানা পরিদর্শনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাচাইয়ে কারখানার উৎপাদিত পণ্য, শ্রমিকের সংখ্যা, মালিকের নামসহ একটি স্বচ্ছ ডাটা আনার চেষ্টা করা হবে। ডাটা যাচাই করে একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে রাখা হবে।
জানা গেছে, টাম্পাকো বিস্ফোরণের পর নিয়মিত পরিদর্শনে অন্তত ১৮টি পয়েন্টকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সারাদেশে ডিআইএফইর ২৩টি উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয়কে। এর মধ্যে বয়লারের মান যাচাই, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা, দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্য নিরাপদ দূরত্বে সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিস্ট কর্মকর্তার সনদও যাচাই করতে বলা হয়েছে। যেসব কারখানায় সংখ্যায় বেশি শ্রমিক কাজ করছেন সেসব কারখানায় দুর্ঘটনায় জরুরি প্রয়োজনে শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনার ব্যবস্থা যাচাই করা হবে। গত সপ্তাহে উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৫০ শতাংশ পোশাক কারখানা, দাহ্য পদার্থের ব্যবহার হয় এরকম ২৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ সাধারণ কারখানাকে পরিদর্শন সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতকে শতভাগ নিরাপদ করার প্রক্রিয়ায় এ শিল্পের পশ্চাৎসংযোগ খাতকেও নিরাপত্তা উদ্যোগের আওতায় আনার কথা উঠছে। টঙ্গীর টাম্পাকো কারখানায় তৈরি পোশাকের পশ্চাৎসংযোগ শিল্প প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদিত হতো।