রপ্তানি আয় বাড়াতে প্লাস্টিক খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গেল অর্থবছরের এপ্রিলেই নেয় সরকার। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরেও এ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে।
তবে প্রথম থেকেই দুটি শর্ত রাখা হয়। যেমন প্লাস্টিক দ্রব্য উৎপাদনের কোনো পর্যায়েই ডিউটি ড্র-ব্যাক সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া রপ্তানির বিপরীতে বন্ড-সুবিধাপ্রাপ্ত এবং ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিজস্ব কারখানায় তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে জাহাজীকরণের আগের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব শর্তের কারণে নগদ সহায়তার সুবিধা খুব বেশি পাচ্ছেন না রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা আরও বলছেন, শুধু সরাসরি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু পোশাকপণ্যের সঙ্গে হওয়া ‘ডিমড এক্সপোর্ট’ বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হিসেবে এ সুবিধা পাওয়া যায় না। আর তাই নগদ সহায়তার সুবিধা থাকলেও এ খাতে রপ্তানি তেমন বাড়েনি বলছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অন্য যেসব খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেসব খাতে এই শর্তগুলো দেওয়া হয়নি। শুধু প্লাস্টিক ও ফার্নিচার খাতেই এই শর্ত রাখা হয়েছে।
মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, মূলত কয়েকটি কারণে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আগে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর জিএসপি-সুবিধা পাওয়া যেত। জিএসপি-সুবিধা বাতিল হওয়ার পর দেশের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারকদের উৎসাহ দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার থেকে ছয়টি পণ্যে পাটের প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক হওয়ার পর দেশীয় প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। তাদের রপ্তানিমুখী করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকায় এই সুবিধা তেমন কাজে লাগছে না।
বর্তমানে সরাসরি প্রায় ১৩ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গার্মেন্টস পণ্যের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বড় রপ্তানিকারকদের বেশির ভাগই বন্ডেড ওয়্যার হাউসের আওতায়। প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামালের অধিকাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই ক্ষুদ্র পর্যায়ে উৎপাদনকারীরা এ সুবিধা পেলেও বড় রপ্তানিকারকেরা এ সুবিধা খুব একটা পান না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য থেকে মোট রপ্তানি আয় আসে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ডলার, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ কম। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্লাস্টিক পণ্য থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ২ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ডলার।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সামগ্রিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ সহায়তার সুবিধা পেতে কী অসুবিধা হচ্ছে, তা এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কেউ জানায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।