সরকার ঘোষিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্যের সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বাংলাদেশে সফররত ডিএফআইডির মহাপরিচালক ডেভিড কেনেডির নেতৃত্বে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকসহ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডিএফআইডির মহাপরিচালক বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। আগামী দিনগুলোয় আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে এখানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোয় আগ্রহী যুক্তরাজ্য। এ অবস্থায় আমরা বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে যাচ্ছে দেশটি। দেশে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সফলভাবেই বাণিজ্য পরিচালনা করছে। বিশেষত তৈরি পোশাক ও কৃষিভিত্তিক শিল্পতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে চায় দেশটি। এজন্য সরকার ঘোষিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাজ্য।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিষয়ে দেশটিকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদার নীতি গ্রহণ করেছে। যে কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান ১০০ ভাগ মূলধন বিনিয়োগ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে মূলধন ও মুনাফা নিয়ে যেতে পারবে। সরকারের এ ধরনের উদার নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ভালো বন্ধু, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশকে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বরাবরই ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে রফতানি করেছে ৩ হাজার ৮০৯ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে পণ্য আমদানি করেছে ২৭৬ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। অর্থাত্, বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বৃত্ত বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৩৩ দশমিক শূন্য ৯ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৬৫৭ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার বেশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রফতানি ৩৪ দশমিক ২৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে দেশের ৫০ বছর পূর্তিতে এ রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক খাত থেকেই আসবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারও বর্তমানে নতুন নতুন পণ্য বিদেশে রফতানিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ ও নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রফতানির বাজার সম্প্রসারণের। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।