Home বাংলা নিউজ পোশাকশিল্পের মালিকেরা চান না, তবু অ্যাকর্ডের সময় বাড়ছে!

পোশাকশিল্পের মালিকেরা চান না, তবু অ্যাকর্ডের সময় বাড়ছে!

accord

রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। তাতে প্রশংসাও কুড়াচ্ছে পোশাক খাত। তবে কারখানা পরিদর্শন ও সংস্কারকাজের পেছনের প্রধান দুই কারিগর ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে নিজেদের কার্যক্রম গোটাবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি। চুক্তি অনুযায়ী এমনটি হওয়ার কথা। তাদের অনুপস্থিতিতে সংস্কারকাজ কীভাবে চলবে? বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন শক্ত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তবে সময়মতো প্রস্তুতি না নিলে দুই জোট আবার মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার জোরালো অজুহাত পেয়ে যাবে। তাতে কারখানার মালিকদের হয়রানি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারে। এমন আশঙ্কায় জোট দুটির মেয়াদের পর সংস্কারকাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, তার একটি রূপরেখা করছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

এক দিকে বিজিএমইএ পরিকল্পনা করছে, অন্যদিকে অ্যাকর্ডের মূল উদ্যোক্তারাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। অ্যাকর্ডের কার্যক্রম তিন বছর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ডগুলো। তাদের যুক্তি—নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হবে না। অ্যাকর্ডের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম বিজিএমইএর নেতাদের এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছে। যদিও মালিকদের সংগঠনের নেতারা চান না অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সময়সীমা বাড়ুক। রাজধানীর বিজিএমইএর কার্যালয়ে গতকাল বুধবার সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গানার ফেগারলিন ও নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর গুস্টাফ এএসপি। বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান, পরিচালক মিরান আলী প্রমুখ।

বৈঠক সূত্র জানায়, এইচঅ্যান্ডএমের কর্মকর্তারা অ্যাকর্ডের সময়সীমা তিন বছর বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিজিএমইএর নেতাদের মনোভাব জানতে চান। তখন নেতারা বলেন, দেশে পোশাকশিল্প যত দিন থাকবে, তত দিন পরিদর্শন ও সংস্কারকাজ চালাতে হবে। তাই তাঁরা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সময় বৃদ্ধি চান না। নেতারা নির্দিষ্ট সময়ের পর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অধীনে নতুন একটি সংস্থা বা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ক্রেতাদের দুই জোটের কার্যক্রম অধিগ্রহণ করার কথা বলেন।

জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান খান গত রাতে বলেন, ‘অ্যাকর্ডের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি এখনো অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্যে আছে। ব্র্যান্ডগুলো একটি অবস্থানে পৌঁছেছে। আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়ে তাদের চিঠি দেব। আসছে জানুয়ারিতে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশে-বিদেশে সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ মে ইউরোপীয় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের যৌথ স্বাক্ষরে ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ গঠিত হয়। পাঁচ বছরের জন্য গঠিত অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে প্রায় ২০০ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। পরে ১০ জুলাই একই উদ্দেশ্য নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের নিয়ে অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি গঠিত হয়। বর্তমানে এই জোটের সদস্য ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। প্রথমে কারখানা পরিদর্শন, তারপর অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা এবং ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি চিহ্নিত করে দিয়েছে তারা। পরে তাদের তত্ত্বাবধানেই কারখানাগুলো ত্রুটি সংস্কারে কাজ করছে। অ্যাকর্ডের অধীনে প্রায় ১ হাজার ৬০০ এবং অ্যালায়েন্সের অধীনে আছে ৬৭১টি পোশাক কারখানা।

চুক্তি অনুযায়ী ক্রেতাদের দুই জোটের সময়সীমা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে। সরকারের দুজন মন্ত্রী একাধিকবার দুটি জোটের সময় না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিজিএমইএর নেতারা জানান, সংগঠনের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি একটি খসড়া রূপরেখা করেছে। প্রাথমিকভাবে সেটি চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত চাইবেন কমিটির সদস্যরা। তারপর রূপরেখাটি চূড়ান্ত করে সরকারকে দেওয়া হবে।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, দায়িত্বটা সরকার নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজটি করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘বিজিএমইএ পুরো প্রক্রিয়াটিতেই বড় অংশীদার। সে জন্যই প্রাথমিকভাবে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই রূপরেখাটি আমরা সরকারকে দেব।’