তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আর তার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখা দরকার। বাজার ধরে রাখা এবং টিকে থাকতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বাসযোগ্যতা। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো-২০১৬। পঞ্চমবারের মতো এ আয়োজনে গতকাল অনুষ্ঠিত সেমিনারে এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা। গতকাল মেলার শুরুতে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন মেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের প্রথম ডেনিম মেলা থেকেই একদিকে যেমন এর পরিসর বাড়ছে এবং বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে, তেমনি মেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।
মোস্তাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, ডেনিম মেলার প্রথম আসরে মেলায় অংশ নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ৪ হাজার ৫০০ জন, দ্বিতীয় আসরে ৫ হাজার ৫০০, তৃতীয় আসরে ৬ হাজার ৮০০, চতুর্থ আসরে ৮ হাজার ৫০০ এবং এবারের পঞ্চম আসরে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী। এর মধ্যে সাত হাজারের মতো দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিনারের বিষয় ছিল ‘৫০ বিলিয়ন ২০২১ অনুসারে উদ্ভাবনের জন্য কৌশলগত ব্যবসায়িক ড্রাইভার’। সেমিনারে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রাইসেল, পিভিএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নাজিব সাঈদ, তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু ও আইএলওর প্রোগ্রাম ম্যানেজার (আরএমজি সেক্টর) টোমো পোওটিআইনেন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির। বক্তারা এ সময় ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের জন্য তৈরি পোশাক খাত বা রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টরে নিরাপত্তাসহ বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে বাংলাদেশ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, তা থেকে বঞ্চিত হবে। এ সময় বাংলাদেশের পোশাক খাতকে কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। তাই দেশের টেকসই তৈরি পোশাক খাতের জন্য এখনই ভাবতে হবে, বাণিজ্য কৌশল কী হবে। সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রাইসেল বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখা দরকার। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বাসযোগ্যতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশ হলে তারা আর জিএসপি ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে না। তখন বিদেশী ক্রেতারাও বাংলাদেশের বাজার নিয়ে নতুন করে চিন্তা করবেন। কারণ ক্রেতারা তখন জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের দিকে ঝুঁকতে পারেন। সুতরাং বাংলাদেশকে এখন থেকেই এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, বিদেশী ক্রেতারা যাতে নিশ্চিন্তে ৫ বা ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। অধিকাংশ বায়ার বা ক্রেতা তার পণ্যের স্থায়িত্ব এবং সঠিক কোয়ালিটি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে চান। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে ভিশন-২১ বাস্তবায়ন সম্ভব। সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ বলেন, ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্র ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে হলে তৈরি পোশাক খাতে নিরাপত্তা প্রয়োজন। এটা করতে পারলে ২০২১ সালের আগেই ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন সম্ভব। তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সংস্কারকাজ চলছে। এরই মধ্যে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সঠিক পথেই এগোচ্ছে।
তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু বলেন, একটি স্বাধীন দেশের উদ্যোক্তা হয়ে আমি স্বাধীনভাবে বিশ্বাস করি যে, পাঁচ বছরের মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন সম্ভব। পিভিএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নাজিব সাইদ বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর কাঁচামাল আছে, কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার এখানকার উদ্যোক্তারা জানেন না। তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে ক্রেতাদের কাছে পণ্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে।