বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। বিশেষ করে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি ও সেবা খাতে বিনিয়োগে নজর দিচ্ছে তারা। ইইউর দেশগুলোর এ আগ্রহ ফুটে উঠছে তাদের রাষ্ট্রদূতদের বিভিন্ন বক্তৃতায়। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে বিজনেস কাউন্সিল ও যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেছেন তাঁরা। তাঁদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতির কথা তুলে ধরে সেবা খাতে লাইসেন্স ও বিনিয়োগ সহজ করা এবং পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আগামী ১৯ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা-সংক্রান্ত সাব গ্রুপের সপ্তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক কমানো, ওষুধ আমদানি বাধা দূর করা, সেবা খাতে বিনিয়োগ, করকাঠামো, নৌপরিবহন ব্যবসা ইত্যাদি বিষয় সভার আলোচ্যসূচিতে রাখতে চাওয়া হয়েছে। আলোচ্যসূচির সঙ্গে ইইউ গত সভার কার্যবিবরণীও পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্যঘাটতি ৯০০ কোটি ইউরোর বেশি। এটা কমাতে তাই ইইউ বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় খুঁজছে।
২০১৫ সালে ইইউতে বাংলাদেশ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ইউরোর পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে ইইউর ২৮টি দেশ থেকে আমদানি করেছে প্রায় ২৪৬ কোটি ইউরোর পণ্য। বাংলাদেশ ইইউর ৩৫তম বড় বাণিজ্য অংশীদার। গত ৩১ অক্টোবর এক ভোজসভায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে এ দেশে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বাড়াতে। কিন্তু আমার জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে।’ তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কোনো ‘জিরো সাম গেম’ (যেখানে এক পক্ষ সুবিধা পায়) নয়।
গত মে মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ-ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপেও ইইউর পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান শুল্ক ও অশুল্ক বাধার অভিযোগ করা হয়। জানতে চাইলে দীর্ঘ সময় ইইউর ঢাকা কার্যালয়ের বাণিজ্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করা জিল্লুল হাই রাজী প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে ব্যবসা বাড়াতে ইইউর আগ্রহ আছে। তবে তারা পণ্য রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বেশি সেবা খাতে। তিনি বলেন, ব্যাংক, বিমাসহ আর্থিক খাত, সমুদ্র পরিবহন, অবকাঠামো, ই-কমার্সে বিনিয়োগে ভালো করতে পারবে তারা।
জিল্লুল হাই রাজী বলেন, ইইউ চীনের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছে। তারা জানে তাদের বাজারে চীনা পণ্য ঠেকানো যাবে না। তবে চীনের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করলে সেখানে সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে বলেই এ চুক্তি করছে ইইউ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার এখন ১৯ হাজার কোটি ডলার। প্রতিবছর যা ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারের আকারও বড় হচ্ছে, যা আকর্ষণ করছে ইউরোপকে।
সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন দেশগুলোর সংস্থা কমনওয়েলথের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্যনীতি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বছরে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশের বাজারের আকার শিগগিরই দ্বিগুণ হবে। এত বড় বাজার সবার কাছেই আকর্ষণীয়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ইউরোপের দেশগুলোর ব্যবসা বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ভোক্তাশ্রেণির অনেক বড় উত্থান হয়েছে। তারা এ সম্পর্কে জানে। স্বাভাবিকভাবেই তারা চাইবে বাংলাদেশের বাজার ধরতে।