রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক l প্রথম আলোইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেলেও ব্যবসার জন্য যুক্তরাজ্যের দরজা খোলা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। বাংলাদেশে বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) আয়োজিত এক ভোজসভায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ কথা বলেন। তবে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার (জিএসপি) আওতায় সে দেশে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ওই কূটনীতিক।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কোনো ‘জিরো সাম গেম’ (যেখানে এক পক্ষ সুবিধা পায়) নয়। ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে আমি দুই দেশেই সমৃদ্ধি আনা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, দুই দেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ ভোজসভার আয়োজন করে ফিকি। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যালিসন ব্লেক, যিনি গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে হাইকমিশনার হয়ে এসেছেন। ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ বা ব্রেক্সিট বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, এখানে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি মৌলিকভাবে শক্তিশালী। এটা ভাবার অনেক কারণ আছে যে ইইউর বাইরে থেকেও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘ইইউ ছাড়ার পর আমরা আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কাঠামো নিজেরাই ঠিক করতে পারব। এমনকি তা আরও উদার হতে পারে। ব্রিটেন আগের মতোই বৈশ্বিক মানসিকতার, নমনীয় ও বড় চিন্তার দেশ হিসেবে থাকবে।’
বক্তব্যের শুরুর দিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার গত জুলাইয়ে গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি দেশে বিনিয়োগ টানতে হলে দেশটির পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং সেখানে বিনিয়োগ নিরাপদ—এই আস্থা তৈরি করতে হয়। জুলাইয়ের ঘটনায় পুরো বিশ্ব ধাক্কা খেয়েছিল। এটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদীরা বাংলাদেশ পর্যন্ত তাদের হাতকে বিস্তৃত করেছে। এ ঘটনার পর বিদেশি নাগরিক, এমনকি ক্রিকেট খেলোয়াড়দের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান অ্যালিসন ব্লেক। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আস্থা ফিরছে। কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থা শিথিল করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়েছে কি না, তা বলার মতো সময় আসেনি।
বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, এ বছর বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস সূচকে দুই ধাপ উন্নতি করেছে। তবে এখনো ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম অবস্থানেই পড়ে আছে। তিনি বলেন, একটি দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভালো করলে অন্যরা আসতে উৎসাহিত হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য এ দেশে দ্বিতীয় বড় বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশের মোট বিদেশি বিনিয়োগের ১৩ শতাংশ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে, যা প্রায় ৩২ কোটি ডলার। ২০০টির বেশি ব্রিটিশ কোম্পানি এ দেশে কাজ করছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের তৃতীয় প্রধান বাজার। তিনি বলেন, ‘আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে এ দেশে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বাড়াতে। কিন্তু আমার জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ব্রিটিশ সরকার সে দেশের সাংসদ রুশনারা আলীকে দায়িত্ব দিয়েছে এবং তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে আসবেন বলে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ফিকির সভাপতি রূপালী চৌধুরী ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। গুলশানের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে একটি শক্ত বার্তা দিতে পেরেছি যে এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতোই চলছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’ নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য এডউইন বোলস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অতিথি হিসেবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা এবং ফিকির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।