বিশ্বখ্যাত পাঁচ ব্র্যান্ড গ্যাপ, এইচবিসি, টার্গেট, ভিএফ করপোরেশন ও ওয়ালমার্ট বাংলাদেশের বহু কারখানা থেকে পোশাক কেনে। রানা প্লাজা ধসের পর কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সংস্কারকাজে অংশও নিয়েছে কারখানাগুলো। তবে ১৭৫টি কারখানায় এখনো তিন ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি রয়ে গেছে। অসংশোধিত এসব ঝুঁকি পোশাকশ্রমিকদের জন্য মারাত্মকভাবে বিপজ্জনক। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বিপজ্জনক বিলম্ব’ নামে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গঠিত উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলো সংস্কারকাজ ধীরগতিতে করছে। ফলে অনেক কারখানায় বিপজ্জনক ত্রুটি থাকলেও কোনো উচ্চবাচ্য করছে না অ্যালায়েন্স কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সংস্কারকাজের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে না।
অ্যালায়েন্সের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই মূলত ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম, ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম, ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন ও ম্যাকুলিয়া সলিডারিটি নেটওয়ার্ক গত সপ্তাহে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এ জন্য অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পাঁচটি ব্র্যান্ডের ১৭৫টি কারখানার সংস্কারকাজের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। কারখানার অন্য অনেক ইস্যু থাকলেও প্রতিবেদনে কেবল তিনটি—জরুরি বহির্গমন বা ফায়ার এক্সিট, ফায়ার অ্যালার্ম ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি—বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭৫টি কারখানার মধ্যে ৪৭ শতাংশের ভবনের কাঠামোগত বড় ধরনের ত্রুটি আছে। ৬২ শতাংশ কারখানার ফায়ার অ্যালার্ম (অগ্নিকাণ্ডের সময় সতর্ক ঘণ্টা) ঠিকঠাকভাবে কাজ করে না। অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকদের বেরোনোর যথাযথ বা টেকসই পথ নেই ৬২ শতাংশ কারখানার। এসব ত্রুটির যেকোনো একটির জন্য পোশাকশ্রমিকেরা আহত হতে পারেন।
অ্যালায়েন্সের কাছ থেকে সংশোধনকাজের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য না পেয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের দ্বারস্থ হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনগুলো। কারণ বেশ কিছু কারখানা অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ডের কাজ করে। প্রতি কারখানা অনুযায়ী সংশোধনকাজের অগ্রগতি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করে অ্যাকর্ড। আবার কোন কারখানা কোন ব্র্যান্ডের কাজ করে, সেটি অ্যালায়েন্স উল্লেখ করে না। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে ব্র্যান্ডগুলোর প্রকাশিত কারখানার তালিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। আর যেসব কারখানা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর এক থেকে দেড় বছর আগে পরিদর্শন শেষ হয়েছে। তাই সব ধরনের ত্রুটি সংস্কারে কারখানাগুলোর সময়সীমা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিবেদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড ওয়ালমার্টের ১০২টি, ভিএফের ৩৬টি, গ্যাপের ৩৭টি, টার্গেটের ২২টি ও এইচবিসির কাজ করে এমন ৬টি পোশাক কারখানা নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। এতে দেখা গেছে, গ্যাপের ৩৭টি কারখানার মধ্যে ২২টির ফায়ার অ্যালার্ম, ১৮টির জরুরি বহির্গমন পথ ও ১৭টির ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি আছে।
অন্যদিকে ওয়ালমার্টের ১০২টি কারখানার ৬০টিতে অ্যালার্ম পদ্ধতি যথাযথ নয়। ৬২টি কারখানার ত্রুটিযুক্ত জরুরি বহির্গমন পথ সংশোধন হয়নি। ৪৫টি কারখানার ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি ঠিকঠাক করা হয়নি। জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিক পরিদর্শনের পরপরই এসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে, এমন কারখানা বর্তমানে নেই বলেই আমরা মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক পোশাক কারখানা ত্রুটি সংশোধন কাজ ধীরগতিতে করতে পারে। তবে সংশোধনকাজের সময়সীমা কিন্তু ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। তাই এখনই কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।’