চলতি অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ডলারের হিসাবে এর পরিমাণ ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে ১২ শতাংশের বেশি। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় বেশি ছিল ১৬ শতাংশ। পোশাকের দুই খাতের মধ্যে নিটের (গেঞ্জি জাতীয় পণ্য) রফতানি কমেছে সবচেয়ে বেশি ১৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি কমলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। নতুন বাজার শ্রেণির দেশগুলোতে বেড়েছে সামান্য ব্যবধানে। গড়ে রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। আয় এসেছে ৬৬৭ কোটি ডলার।
একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার। এতদিন পর্যন্ত মোট আয়ের ২১ শতাংশ আসত দেশটি থেকে। প্রথম প্রান্তিকে বড় ব্যবধানে রফতানি কমে যাওয়ার কারণে এ হার এখন ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রায় সব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি ভোগ করলেও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে এ সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তৈরি পোশাকসহ ছোট-বড় সব পণ্যেই গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক ধার্য রয়েছে। যদিও প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক কখনই মার্কিন জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না। রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেয় ওবামা প্রশাসন। ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ স্থগিতাদেশ কার্যকর রয়েছে।
এত বেশি হারে রফতানি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং রফতানিকারকরা বলছেন, আলোচ্য সময়ে সারাবিশ্ব থেকে দেশটির আমদানি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের একই সময়ে অস্বাভাবিক ১৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণে এখন রফতানি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, রফতানি কমে যাওয়ার এ তথ্য প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। অন্যান্য দেশের নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যেও ভিয়েতনামের রফতানি এ সময় বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে চীনের ছেড়ে দেওয়া বাজার পাচ্ছে ভিয়েতনাম। এ বাজার যাতে বাংলাদেশও পেতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়তে হবে। এজন্য সহজে ব্যবসা করার সুযোগ এবং ব্যয় কমাতে হবে। উৎপাদনশীলতা এবং তৈরি পোশাকের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হ্রাসের এ চিত্রকে স্বাভাবিক ওঠা-নামা বলে মনে করেন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির। তথ্য দিয়ে তিনি সমকালকে বলেন, আলোচ্য তিন মাসে সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ কারণে চীনের রফতানি কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। ভারত, কম্বোডিয়া সব দেশেরই রফতানি কমেছে। ব্যতিক্রম শুধু ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। তিনি বলেন, টিপিপি কার্যকর না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ভিয়েতনামে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আগাম বিনিয়োগ করছে। এ কারণে দেশটির রফতানি বেড়েছে।