অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কারণ দেখিয়ে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশে পণ্য পরিবহন) পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। এর পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণকাজের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় সরকার। পাশাপাশি বাড়ানো হয় নিরাপত্তাও। তা সত্ত্বেও শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বিমানবন্দরটি পরিদর্শনকারী ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। ফলে সহসা প্রত্যাহার হচ্ছে না সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্যের দেয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি মতামত দেয় যে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। কারণ কার্গো ভিলেজ থেকে পণ্য উড়োজাহাজে ওঠানোর সময়টি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে রেড লাইনের মাধ্যমে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টির প্রশংসা করে প্রতিনিধি দল; যদিও অনেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না বলে মন্তব্য করেন তারা। পাশাপাশি কার্গো পরিবহনে দ্রুত প্যালেট সংযোজন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো পরিবহন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি দল বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিমানবন্দরের পরিস্থিতি সবসময় পর্যবেক্ষণের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন তারা। ছোটখাটো যেসব ত্রুটি এখনো রয়ে গেছে, সেগুলো ঠিক হলেও পুনরায় সরাসরি কার্গো পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ১৭ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকসহ যুক্তরাজ্যের ফরেন ও কমনওয়েলথ ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের ডিজি জনাথন এলেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সে সময় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট আরোপিত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেন রাশেদ খান মেনন। গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্থাপনকৃত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি সম্পর্কে অবহিত করে তিনি জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সমপর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘রেড লাইন সিকিউরিটি’ চলতি বছরের মার্চ থেকে কাজ করছে।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) বিভাগের দুই সদস্যের উচ্চপর্যায়ের দল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে। তবে প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণে সন্তোষজনক না হওয়ায় ওই সময় সরাসরি কার্গো ফ্লাইট অবতরণে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে অগ্রগতি হয়নি। এ প্রসঙ্গে বেবিচকে উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানোর জন্য যা যা দরকার সব করা হচ্ছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাকে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যৌথবাহিনী ও রেড লাইন কাজে যোগ দেয়ায় শাহজালালের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য। এর আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব অনুযায়ী গত ২১ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণকাজের জন্য যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেড লাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বেবিচক। চুক্তি অনুযায়ী, রেড লাইন বিমানবন্দরে তিন ধরনের কাজ করবে। পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বিমানবন্দরে যে জনবল আছে তাদের পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে তারা। আগামী দুই বছরের জন্য রেড লাইনকে এ দায়িত্ব দেয়া হলেও ছয় মাস পর অগ্রগতি রিভিউ করা হবে।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের— কোর সিকিউরিটি বা ফিজিক্যাল সিকিউরিটি এবং এভিয়েশন সিকিউরিটি বা নন-কোর সিকিউরিটি। ফিজিক্যাল সিকিউরিটির আওতায় রয়েছে বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন, রানওয়ে, অপারেশন টাওয়ার, রাডার স্টেশন, মার্কার, ভিওআর, লোকালাইজার, গ্লাইডপাথসহ সব ধরনের স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো। অন্যদিকে এভিয়েশন সিকিউরিটির আওতায় রয়েছে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের সময় যাত্রীর দেহ তল্লাশি ও লাগেজ চেক, কার্গো চেক, স্ক্রিনিং, ফ্লাইট সেফটি এবং আনুষঙ্গিক কাজ।