Home বাংলা নিউজ ২২ কোটি টাকা জরিমানা ট্যানারি মালিকদের

২২ কোটি টাকা জরিমানা ট্যানারি মালিকদের

২২-কোটি-টাকা-জরিমানা-ট্যা

প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে ১৫৪টি ট্যানারি মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগে এখনও কারখানা চালু রেখেছে। আদালতের রায়ের পর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত এসব ট্যানারির ওপর মোট জরিমানা আরোপ হয়েছে ২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যদিও ৩৫টি ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কাঁচাচামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরোপুরি যেতে পারেনি কোনো ট্যানারি। নির্ধারিত সময়ে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করায় তাদের এ জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪টি ট্যানারি শিল্পমালিককে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে গত ১৮ জুলাই রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের পর প্রায় পাঁচ মাস হতে চললেও সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর শেষ হয়নি। এ কারণে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। তবে ট্যানারি স্থানান্তরের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করছেন তারা। শিল্প মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, জানুয়ারি থেকে বন্ধ থাকবে হাজারীবাগের ট্যানারি।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, গত মাসে জরিমানা আদায়ের একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নামে খোলা ব্যাংকের হিসাবে জরিমানার অর্থ জমা পড়ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে শুরু থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ আদায়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে বিভিন্ন ট্যানারি। ১৫৪টি ট্যানারির সবাই এখনও টাকা জমা দেয়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান একাধিকবার দিয়েছে।

জানা গেছে, চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালকের কাছে এ পর্যন্ত জরিমানা মওকুফ চেয়ে আবেদন করেছে ৩৫ ট্যানারি। জরিমানা মওকুফ করার জন্য সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে এসব ট্যানারি কাঁচাচামড়া প্রক্রিয়াজাত করছে। তবে এর মধ্যে কিছু ট্যানারি সাভার ও হাজারীবাগ দুই জায়গায় কারখানা চালু রেখেছে। চামড়াশিল্প প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ট্যানারি স্থানান্তরের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন আদালত। যারা সাভারে ট্যানারি চালু করেছে, তাদের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। তারা জানান, এ মাসের মধ্যে সব ট্যানারি সাভারে যেতে হবে। এর পর হাজারীবাগের সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই এলাকায় কোনো কাঁচা চামড়া ঢুকবে না। সাভারে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে সব ট্যানারি চালু করা হলে বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন সমকালকে বলেন, জানুয়ারি থেকে অধিকাংশ ট্যানারি সাভার শিল্পনগরীতে চালু হবে। যেসব ট্যানারি চালু হয়েছে, তাদের জরিমানা মওকুফের জন্য ছাড়পত্র চেয়ে বিসিকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। যারা যায়নি, তারা এ মাসের মধ্যে যাবে। এর পরও যারা যেতে পারবে না, তাদের হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ থাকবে। জানুয়ারি থেকে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকবে না। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, জরিমানা দিয়ে চামড়া খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে দ্রুত স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ সমকালকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে অর্ধশতাধিক ট্যানারি চালু হবে। কিন্তু সবার যেতে কিছুটা সময় লাগবে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন সবাই সাভার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আদালতে দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জুন ১৫৪টি ট্যানারির মালিককে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর হওয়ার আগপর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন ট্যানারি মালিকরা। এরপর ১৮ জুলাই আপিলের রায়ে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।