সহজভাবে ব্যবসা করার সুযোগ পেতে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) স্থাপনে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এখন পর্যন্ত পৃথক অঞ্চল স্থাপনে অর্ধশত উদ্যোক্তা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে আলাদাভাবে আবেদন করেছেন। বিশেষায়িত এসব শিল্পাঞ্চলে সরকার জমি, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ব্যবস্থা করে থাকে। একই সঙ্গে গ্যাস ও কর সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ থাকায় বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের কাছে এসব অঞ্চল আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তারা নতুন শিল্প স্থাপনে ইজেডের দিকে ঝুঁকছেন। দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠী ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্য কিনে রাখা জমিতে এখন ইজেড স্থাপন করতে চায়।
সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে বেজার গভর্নিং বোর্ডে ৭৪ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ২০টি ইজেড স্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেসরকারি ২০টির মধ্যে ১৩টি ইজেডের প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স দিয়েছে বেজা। এর মধ্যে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে। আরও কয়েকটি চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
বেজা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ১৩টি প্রাক-যোগ্যতা সনদ পাওয়া কোম্পানির মধ্যে আবদুল মোনেম, বে, আমান গ্রুপ আরও একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য আবেদন করেছে। মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপ আরও দুটি করে ইজেড স্থাপনের জন্য আবেদন করেছে। এ ছাড়া নতুন আবেদন দিয়েছে বিডিজি-মাগুরা গ্রুপ ও জজ ভূইয়া গ্রুপ দুটি এবং টি কে গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, জে কে গ্রুপ, বাল্ক টেড ইন্ডাস্ট্রিজের পলাশ, কর্ণফুলী ড্রাইডক, অ্যালায়েন্স হোল্ডিং, ইস্ট কোস্ট গ্রুপ, ইবরাহীম গ্রুপ, প্রবাসী পল্লী গ্রুপসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান একটি করে ইজেড স্থাপনের আবেদন করেছে। এসব কোম্পানির ইজেড করতে চাইলেও সব আবেদন বিবেচনায় নিচ্ছে না বেজা। গভর্নিং বোর্ডে অনুমোদনের আগেই বাছাই করা হচ্ছে। আবার বোর্ডে অনুমোদন পেলেও সব সক্ষমতা যাচাই করে প্রাক-যোগ্যতা সনদ দিচ্ছে বেজা।
প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি, আবদুল মোনেম, বে, আমান, মাইশা, ইউনাইটেড, ইউনিক ও আকিজ গ্রুপ একটি করে এবং মেঘনা তিনটি ও বসুন্ধরা দুটি। এর বাইরে সিটি গ্রুপের দুটি, ফমকম গ্রুপের একটি, অ্যালায়েন্স হোল্ডিংয়ের একটি, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের একটি, ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি সিরাজগঞ্জ ও বিজিএমইএর পোশাকপল্লীর গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদন আছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সমকালকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে এখন অনেকেই এগিয়ে আসছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সব নিয়মকানুন মেনে অনুমোদন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেসব কোম্পানি আবেদন দিয়েছে, তাদের কারিগরি, ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সক্ষমতার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। অনেক বেশি আবেদন পড়ায় এখন অনেক বেশি বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। সঠিক ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বেজা সূত্র জানায়, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ৫০টি সরকারি ও ৫০টি বেসরকারি ইজেড হতে পারে। তবে ভূমির আয়তনের দিক থেকে সরকারি ৮০ ভাগ ও বেসরকারি ২০ ভাগ হবে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ইজেড স্থাপনে জমি নির্বাচনের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার জমিতে এবং নদী দখল কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করে স্থাপনে অনুমতি মিলবে না। ইজেড করতে হলে নিজস্ব শিল্প থাকতে হবে। কোম্পানির সুনাম ও ব্যবসা করার পূর্ব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।