সাভারের আশুলিয়ায় বন্ধ সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে আজ। গতকাল এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বন্ধ কারখানা খোলার এ ঘোষণা দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
১১ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়ার কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, নিয়ম অনুযায়ী ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের প্রাপ্য পরিশোধ ও ছুটিকালীন বেতন বহাল রাখাসহ ১৫ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছিলেন। কর্মসূচির একপর্যায়ে বিক্ষোভ দেখা দিলে আরো বিরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কায় আলোচনা ও সংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সহযোগিতায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা প্রয়োগ করে ২০ ডিসেম্বর ৫৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর গতকাল পর্যন্ত ওই এলাকার দুই সহস্রাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে বিভিন্ন কারখানার মালিকপক্ষ। এছাড়া কিছু কারখানায় শ্রমিকদের সাময়িক বরখাস্তের ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ এসব পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ।
গতকাল বিজিএমইএ আয়োজিত জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকায় গত পাঁচদিনে ৩০টিরও বেশি শ্রমিক সংগঠন লিখিতভাবে কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। আবার বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে প্রতিদিনই কারখানায় এসেছেন। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে, শ্রমিকদের অনুরোধে ও সার্বিক অর্থনীতির দিক বিবেচনা করে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, সাভারের আশুলিয়ায় বন্ধ ঘোষিত ৫৯টি কারখানা খুলে দেয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মালিকদের অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, ২০ ডিসেম্বর বিকালে বিজিএমইএর কার্যালয়ে আশুলিয়ার ২০-২৫ জন কারখানা মালিকের সঙ্গে সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নয়দিন ধরে আশুলিয়ায় শ্রম সমস্যা চলছে। শুরুতে একটি কারখানায় সমস্যা থাকলেও পরে তা বিভিন্ন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সমস্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায় যে কারখানার শ্রমিকরা কাজ করছেন না, সেসব কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ ঘোষণার আওতায় পাঁচদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোয় উৎপাদন বন্ধ ছিল বলে দাবি করে বিজিএমইএ।
এদিকে ২১-২৪ ডিসেম্বর মোট পাঁচদিন কারখানা বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকলেও ২৩ ডিসেম্বর থেকে একটি-দুটি করে কারখানা আংশিক সচল হতে শুরু করে। ২৪ ডিসেম্বর চারটি কারখানা চালু হয়। এদিন কারখানাগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দেন। গতকাল এ চারটিসহ খোলা ছিল মোট নয়টি কারখানা। এ কারখানাগুলো হলো— এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, হোয়াইট সোয়েটার, টিএমএফ ক্লদিং, হুয়েন অ্যাপারেলস, এক্সিলেন্ট সোয়েটার, প্রাইম ক্যাপ বিডি, ডংলিয়ান, ফান গার্মেন্ট ও স্যামস অ্যাটায়ার।
গতকালের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, মামলা হয় ‘ক্রিমিনালদের’ নামে। যেসব শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলো নিষ্পন্ন হবে আইন অনুযায়ী। বন্ধ থাকাকালে শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ও নিষ্পন্ন হবে ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী। আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষ দেশের বাইরের উসকানিতেও হতে পারে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা থাকলেও তারও সমাধান হবে আইন অনুযায়ী। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে বিজিএমইএর নয়, সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে একমাত্র সরকারের।