বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল ‘৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি এবং সিইবিএআই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তাগিদ দেন বক্তারা। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে তৈরি পোশাক উত্পাদক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রি (সিইবিএআই)। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিইবিএআইয়ের পরিচালক রেজাউল হাসনাত ডেভিড।
মূল প্রবন্ধে রেজাউল হাসনাত বলেন, দেশে তৈরি পোশাক খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন এখন পর্যন্ত বিদেশী গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। তাদের নির্দেশনা অনেক সময় দেশী উদ্যোক্তাদের ভুল পথেও নিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, তারা সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে নিজেরাই জানেন না। এমনকি কোনো কোনো বিষয় বুঝতেও পারেন না। এ কারণে তৈরি পোশাক খাতে নিজস্ব গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকা জরুরি। আইএলও, সিআইডিএ ও এইচঅ্যান্ডএমের সহায়তায় সিইবিএআই বাংলাদেশে এ কাজটি করে যাচ্ছে।
বৈঠকে বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ মূলত টি-শার্ট, সোয়েটার, জ্যাকেট, শার্ট, ট্রাউজার— এ পাঁচ ধরনের পণ্য তৈরির ওপর নির্ভরশীল, যা তৈরি পোশাক খাতের মোট রফতানির প্রায় ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন ক্রীড়া পোশাক, স্যুট, অন্তর্বাসসহ উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করতে হবে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণে জোর দিতে হবে। এখনই তৈরি পোশাকের নকশা, পণ্য বহুমুখীকরণ ও গবেষণায় জোর দিতে হবে। সস্তা শ্রমের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন ক্রেতা ও নামিদামি ব্র্যান্ড পোশাক তৈরির জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়। এখন সময় এসেছে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে খাতটির বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা তৈরি করার।
সিইএবিআই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, দেশী-বিদেশী চাপের পরও দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সাড়ে তিন হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে গত তিন বছরে মাত্র ১০০ কারখানা সম্পূর্ণভাবে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। এখনো ৩ হাজার ৪০০ কারখানা সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি। এ বিষয়ে আমাদের জোর দিতে হবে।
এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিংয়ে আরো জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সিইএবিআই সভাপতি বলেন, পোশাক খাতে বাংলাদেশ অনেক ভালো করলেও এর কোনো ব্র্যান্ডিং হচ্ছে না। এখনো পোশাক খাতে বাংলাদেশের মান যাচাইয়ের সময় রানা প্লাজার দুর্ঘটনার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। এটি প্রতিরোধে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং বাড়ানো জরুরি। এজন্য দক্ষ জনশক্তি, ন্যায্যমূল্যে জমি, অবিচ্ছিন্ন জ্বালানি, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো ও স্থিতিশীল রাজনীতি জরুরি।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহিদ উল্ল্যাহ আজিম বলেন, ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জনে এখনো ১৫ থেকে ২০ লাখ দক্ষ শ্রমিকের সংকট রয়েছে। শ্রমিক নেতা বাবুল আকতার বলেন, সম্প্রতি আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ ও বিরোধ ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। এজন্য মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনো অনেক কারখানায় ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা বাস্তবায়ন হয়নি। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়ার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে উত্পাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব।