বাংলাদেশের আশুলিয়ায় বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সোমবার এই বিষয়ে ত্রি-পক্ষীয় একটি বৈঠকে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হলেও, মঙ্গলবারও অর্ধশত কারখানার শ্রমিকরা কাজ থেকে বেরিয়ে যান, এরপরই বিজিএমইএ এই সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় প্রায় অর্ধশত কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিয়ে, কাজ না করেই বেরিয়ে যান। সকালে পুলিশের সাথে ধাওয়া এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে দুপুরে আশুলিয়ার ৫৫টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, নতুন কোন কারখানায় বিক্ষোভ হলে, সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, “যেসব ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা কাজ করছেন না সেগুলো এখন বন্ধ হয়েছে। আর ভবিষ্যতে যদি অন্য ফ্যাক্টরিতে এভাবে শ্রমিকরা কাজ না করে, সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হবে। যতদিন শ্রমিকরা কাজে না ফিরবে, ততদিন এগুলো বন্ধ থাকবে।”
কারখানা বন্ধ না করে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান হতো কিনা, জানতে চাইলে মি. রহমান বলছেন, “তারা তো তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানায় নি। তারপরেও গত ন’দিন ধরেই তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তাদেরকে বর্তমানের বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝিয়েছি। কিন্তু তারা সেগুলো শোনে নি।” সোমবার মালিক, শ্রমিক এবং সরকার পক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক হয়, যেখানে আন্দোলন স্থগিতের একটি সমঝোতা হয়েছে বলে সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলছেন, “তাদের কর্ম বিরতি কেন, সেটাই তো আমরা জানি না।” “শ্রমিকদের পক্ষ থেকে, শ্রমিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আমাদের কাছে কোন দাবি-দাওয়া, লিখিত বা অলিখিতভাবে দেয়নি। তাহলে আমরা কি করে বুঝবো, যে শ্রমিকরা কি চায়। আমাদের বরং মনে হচ্ছে, এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ,” বলেন তিনি। শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিন বলছেন, শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে তারা সরকারকে জানিয়েছেন, কিন্তু তারা কোন সাড়া পাননি।
মি. আমিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে আমরা স্মারকলিপি দিয়ে বলেছি যে, মজুরি বোর্ড গঠন করে যেন শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তাতে কোন সাড়া পাইনি। এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সকল শ্রেণী পেশার আয় বেড়েছে, বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়িয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে বর্তমান বেতন দিয়ে শ্রমিকরা কোনমতেই চলতে পারছে না।” তৈরি পোশাক খাতের সব পক্ষের সম্মতিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। মালিকরা বলছেন, পাঁচবছরের আগে এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।
তবে কিছু শ্রমিক সংগঠনের দাবি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এখনই আলোচনা শুরু হওয়া উচিত, যদিও এ নিয়ে অনেক শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে মত ভিন্নতাও রয়েছে। কিন্তু সেসব দাবির বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিক আলোচনা না হয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে কেন? শ্রমিক নেত্রী শামীমা নাসরিন বলেছেন, প্রত্যেকে যার যার মতো করে কথা বলছে।
“শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কেউ কথা বলছে না। শ্রমিকরাও আস্থা পাচ্ছে না যে কার উপর তারা নির্ভর করবে? কারখানায় যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকতো, তাহলে তাদের মানানো যেতো, তারা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। কিন্তু এখন তারা কারোই দিক নির্দেশনাই মানছে না, নিজেদের মতো কাজে যাচ্ছে বা বেরিয়ে যাচ্ছে।” কারখানা মালিকরা বলছেন, শ্রমিকরা কাজে না আসায়, যেসব কারখানা বন্ধ থাকবে, আইন অনুযায়ী সেসব কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাবে না। আর বাংলাদেশের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামলাতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছেন।