আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৬তম আঞ্চলিক সম্মেলনে ‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক’ বা শোভন কাজের সংখ্যা বাড়াতে সম্মত হয়েছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সরকার, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। এ জন্য আগামী চার বছর দেশগুলো শ্রমিকের অধিকার-সংক্রান্ত আইএলওর কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরের হার বাড়ানো, শোভন কাজের জন্য নীতি গ্রহণ, সামাজিক সংলাপ আয়োজন, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেবে। আইএলওর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্মেলন শেষে দেওয়া বালি ঘোষণায় এসব কথা বলা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালিতে চার দিনের এ সম্মেলন গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন পরবর্তী সম্মেলনের আগ পর্যন্ত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে বড় ভূমিকা রাখে।
এবারের সম্মেলনে বড় আলোচনার বিষয় ছিল শোভন কাজ। আইএলওর ১৪তম সম্মেলনে ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালকে ‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক দশক’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য জাতিসংঘ অনুমোদিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ক্ষেত্রে ডিসেন্ট ওয়ার্ক বা শোভন কাজকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে ৩৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আইএলওর বালি ঘোষণায় বলা হয়, এ অঞ্চলের সরকার, নিয়োগকারী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা শোভন কাজকে এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছেন। শোভন কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়, সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে, অর্থনীতিতে গতি আনে ও টেকসই উন্নতি ত্বরান্বিত করে।
আইএলওর মতে, যে কর্মসংস্থান শ্রমিকের ন্যায্য আয়, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত উন্নতির সম্ভাবনা, পরিবারের সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, তা-ই ডিসেন্ট জব বা শোভন চাকরি। জাতিসংঘের অনুমোদিত এসডিজির মূল সুর হলো বৈষম্য কমানো, আর স্লোগান হলো কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৮ নম্বরটিতে সুনির্দিষ্টভাবে সবার জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বালি ঘোষণার প্রেক্ষাপট অংশে বলা হয়, এ অঞ্চলের দেশগুলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। তাদের আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, সামাজিক সুরক্ষার আওতা সম্প্রসারিত হয়েছে। আবার এ-ও বলা হয়েছে, এখনো বহু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ১০০ কোটির বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থান নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে। আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি। উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে। ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশগুলোতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার ভাগ সবাইকে দিতে হবে। শ্রমের ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
বালি ঘোষণায় দেশগুলোর জাতীয় নীতি ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে ১৩টি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। অন্যদিকে আইএলওর কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ১০টি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের দেশগুলো শ্রম অধিকার রক্ষায় আইএলওর কনভেনশনগুলো স্বাক্ষরের চেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাবে, বিশেষ করে সংগঠন করা ও দর-কষাকষির অধিকার-সংক্রান্ত ৮৭ ও ৯৮ নম্বর কনভেনশন মানা হবে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশ এ কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেনি। এ ছাড়া দক্ষতা উন্নয়ন, শিশু ও বাধ্যতামূলক শ্রম নিরসন, তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) উন্নতি বিবেচনায় নেওয়া, নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো, শ্রম অভিবাসনে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে বালি ঘোষণায়। বিষয়টি এগিয়ে নিতে আইএলওকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।