অন্য যেকোনো শিল্পের মতোই পোশাক শিল্পে চাকরির জন্যও প্রয়োজন ন্যূনতম দক্ষতা। যদিও এ দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ধারণাও নেই অধিকাংশ পোশাক শ্রমিকের। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের (এনএসডিসি) সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, পোশাক শিল্পে চাকরি নিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই ৫৫ শতাংশ শ্রমিকের।‘স্টাডি অন মাইগ্রেশন প্যাটার্ন অব ওয়ার্কফোর্স ইন আরএমজি সেক্টর ফর পজিশনিং আরএমজি রিলেটেড স্কিল ট্রেনিং সেন্টার’ শীর্ষক গবেষণার আওতায় মোট ১ হাজার ৬৫ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ চালায় এনএসডিসি। নিট ও ওভেন— দুই খাতের শ্রমিকই অংশ নেন এতে। জরিপের জন্য বেছে নেয়া হয় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের মোট ১১টি কারখানা। জরিপে অংশ নেয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী। পোশাক শ্রমিকরা কেন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না, তার কারণও উঠে এসেছে এনএসডিসির জরিপে। জরিপে অংশ নেয়া ৫৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে সময় অপচয় বলে মনে করেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঘাটতির কথা জানান ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শ্রমিক। প্রশিক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ায় এ ব্যাপারে অনাগ্রহের কথা জানান ১ দশমিক ৫২ শতাংশ শ্রমিক। এনএসডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খোরশেদ আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, পোশাক শিল্পে যে ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত, তাদের প্রায় অর্ধেক সুইং মেশিন অপারেটর। এদের মাইগ্রেশন ও দক্ষতার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা এ স্টাডির মাধ্যমে আমরা জানতে চেয়েছি। পর্যালোচনা বলছে, প্রতি বছর এ খাতের প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিককে প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। জরিপে যে ফলাফল বেরিয়ে এসেছে, তার আলোকে আমরা পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। যারা প্রশিক্ষণ নেননি কিন্তু পোশাক শিল্পে কর্মরত, তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। জরিপে দেখা গেছে, যেসব অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা পোশাক শিল্পে যোগ দিচ্ছেন, সেসব অঞ্চলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশের দেয়া উত্তর অনুযায়ী তাদের এলাকায় পোশাক শ্রমিকের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। ৬৮ দশমিক ২৭ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তাদের এলাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তাই যেসব এলাকা থেকে শ্রমিকরা পোশাক শিল্পে কাজ নিচ্ছেন, সেসব এলাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৭১ দশমিক ৬৩ শতাংশ শ্রমিককে চাকরি পেতে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর ভিত্তিতে এনএসডিসি বলছে, পোশাক শিল্পে কাজ পেতে দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ শ্রমিক চাকরি পেয়েছেন আত্মীয়স্বজনের সুপারিশে। পরিচিতদের সহযোগিতায় চাকরি পেয়েছেন ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ শ্রমিক। এছাড়া ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ শ্রমিক চাকরি পেয়েছেন তাদের আঞ্চলিক পরিচয়ের পরিপ্রেক্ষিতে। বেশির ভাগ পোশাক শ্রমিক হেলপার হিসেবে নিয়োজিত থেকে কাজ শিখছেন বলে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ৭৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ শ্রমিক হেলপার হিসেবে কাজ শিখছেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ শিখছেন মাত্র ১ দশমিক ২৯ শতাংশ শ্রমিক। কারখানা কর্তৃপক্ষ আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ শ্রমিক। এছাড়া ১৯ দশমিক ৪১ শতাংশ অন্যান্য পন্থায় প্রশিক্ষিত হচ্ছেন। বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পোশাক শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। হাই ভ্যালু পণ্য প্রস্তুত ও রফতানির জন্যই এর প্রয়োজন বেশি। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সরকার ও বেসরকারিভাবে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের সহায়তায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমগুলোর আওতায় পোশাক শিল্পও রয়েছে। এছাড়া বিজিএমইএরও কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। পোশাক খাতের অর্জনকে আরো এগিয়ে নিতেই সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা পূরণে ভবিষ্যতে বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।