গত বছরের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। তবে বছরের শেষের দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সুসংবাদ পায়নি বাংলাদেশ। পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় এই বাজারে রপ্তানি কমছে বাংলাদেশের। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। এটি তার আগের বছরের একই সময়ের ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের এই পোশাক আমদানি কমিয়ে দেওয়ার প্রভাব ভিয়েতনাম ছাড়া সব দেশের ওপরই কম-বেশি পড়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ। পরের দুই মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৮ ও ৪ শতাংশ। এপ্রিল থেকে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের ওপরে তবে ২ শতাংশের মধ্যে চলে আসে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি চলে আসে ১ শতাংশের নিচে। অক্টোবর থেকে এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হতে শুরু হয়।
বিদায়ী বছরের জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪৯৪ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ; যা ২০১৫ সালের একই সময়ের ৫০০ কোটি ডলারের চেয়ে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ কম।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওভেন পোশাক বেশি যায়। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ ধরনের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে ভালো মৌসুম। তারপরও কেন রপ্তানি আয় কমছে সেটির প্রকৃত কারণ আমরাও খুঁজে পাচ্ছি না।’বিজিএমইএর সহসভাপতি আরও বলেন, সংখ্যার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ খুব একটা কমেনি। মূল্য কমেছে। এদিকে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক রপ্তানি কমিয়ে দিলেও ভিয়েতনামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটি ১ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ভিয়েতনামসহ ১১টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি করেছিল। এটি বাস্তবায়ন হলে টিপিপিভুক্ত দেশ পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনামের সঙ্গে আগে থেকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাদের রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিপিপি বাতিল করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এসব তথ্য দিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত টিপিপি বাতিল হলে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীন। এই দেশটি থেকে ৩৪ শতাংশ পোশাক যায়। গত বছরের ১১ মাসে চীন ২ হাজার ৬০২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ কম। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ইন্দোনেশিয়া ৩৩৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। তাদের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ভারত রপ্তানি করেছে ৩৩৯ কোটি ডলারের পোশাক। এটা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা মেক্সিকো রপ্তানি করেছে ৩১৩ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক, ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।