গার্মেন্টস কারখানার কর্মপরিবেশ বা কমপ্লায়েন্স নিয়ে বিস্তর আলোচনা চললেও এখনো অনেক কারখানা কমপ্লায়েন্স মানের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র এক জরিপে দেখা গেছে, তাদের সদস্যভুক্ত মাত্র ১ হাজার ৭৮৮টি প্রতিষ্ঠান কর্মপরিবেশের সব নিয়ম মেনে চলে। এগুলো এ গ্রেডের কারখানা। অবশ্য এই কারখানাগুলোর মধ্যে শতভাগই কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স এ ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।
সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ৩ হাজার ৩৫৭টি কারখানার মধ্যে ওই জরিপ করা হয়েছে। কর্মপরিবেশের মান বিবেচনায় ‘বি’ গ্রেড বা কিছুটা পিছিয়ে থাকা কারখানার সংখ্যা ৯৮৯টি। আর ‘সি’ গ্রেডভুক্ত কারখানা বা কর্মপরিবেশে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ৫৮০টি কারখানা। অর্থাত্ প্রায় ১ হাজার ৫৫৯টি কারখানা কমপ্লায়েন্সের সব নিয়ম মেনে চলে না। বলা যায়, এসব কারখানায় পুরোপুরি কমপ্লায়েন্ট বা কর্মপরিবেশ সম্পন্ন নয়।
তবে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কর্মপরিবেশের মানদণ্ডে এসব কারখানায় বড় ধরনের ত্রুটি নেই। ছোট-খাট কিছু ত্রুটি থাকলেও তার সমাধানও চলমান রয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বিজিএমইএ’র কমপ্লায়েন্স মান সংক্রান্ত এ রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কমপ্লায়েন্সের ২৬টি মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রতি বছরই বিজিএমইএ তাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর উপর এ ধরনের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট তৈরি করে থাকে। এর মধ্যে কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের নিয়োগপত্র প্রদান, ছবিসহ পরিচয়পত্র দেয়া, চাকরি বহি, হাজিরা কার্ড সংরক্ষণ,সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ ও নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করার মত বিষয়ও কমপ্লায়েন্সের মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছুটির বিধান অনুসরণ করা, কাজের সময়সূচী পরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদন, প্রসুতি কল্যাণ ছুটি ও ভাতা প্রদান, শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ডে কেয়ার সেন্টার, প্রাথমিক চিকিত্সার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, দুর্ঘটনার নোটিশ প্রেরণ, নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় আনা হয়। বিবেচনায় আনা হয় সংশ্লিষ্ট কারখানায় পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাও। এছাড়া কারখানায় অংশগ্রহণমূলক কমিটি, সেফটি কমিটি, শ্রমিকদের জীবন বীমা এবং ক্যান্টিন সুবিধার মত বিষয়ও বিবেচনায় আনা হয়।
এসব শর্তের ভিত্তিতে যেসব কারখানা ৮৫ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্ত হয়েছে, সেগুলোকে কমপ্লায়েন্স কারখানা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ৭০ থেকে ৮৪ প্রাপ্ত কারখানাকে ‘বি’ গ্রেড ও ৭০ এর নিচে নম্বর প্রাপ্ত কারখানাকে ‘সি’ গ্রেডভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।