শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বিদায়ী বছরটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হলো না। গত বছর দেশটিতে ৫৩০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এই আয় তার আগের বছরের ৫৪০ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানির পরিসংখ্যান আমলে নিলে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকেরা। কারণ ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ কম, অর্থাৎ ৮ হাজার ৭১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এ জন্যই বাজারটিতে চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকোর মতো বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানি কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম আছে, সেটি হচ্ছে ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ছয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ভিয়েতনামই গত বছর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাজারটিতে গত বছর ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। এই আয় ২০১৫ সালের ১ হাজার ৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, ভিয়েতনামসহ ১১টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি করেছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে টিপিপিভুক্ত দেশ পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনামের সঙ্গে আগে থেকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাদের রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিপিপি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ বাজারটিতে মন্দাভাব চলছে। তাই সব রপ্তানিকারক দেশের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আশার খবর হচ্ছে, টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ভিয়েতনাম যে সুবিধা পেয়েছিল, সেটি এখন থাকছে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক আমদানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমলেও বাজার হিস্যা বেড়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল। গত বছর সেটি বেড়ে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ হয়েছে। বাজারটিতে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছর ১৮৬ কোটি বর্গমিটার কাপড়ের সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। পরিমাণটি ২০১৫ সালের ১৮৭ কোটি বর্গমিটারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ কম। তার মানে, রপ্তানি হওয়া পোশাকের মূল্য কমে গেছে।
এদিকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে চীনের। বাজারটিতে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক চীন গত বছর ২ হাজার ৭৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এটি ২০১৫ সালের ৩ হাজার ৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ কম। বর্তমানে চীনের বাজার হিস্যার পরিমাণ ৩৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এক বছর আগে ছিল ৩৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকো। বাজারটিতে গত বছর ইন্দোনেশিয়া ৪৭০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০১৫ সালের চেয়ে তাদের রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ভারতের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩৬৪ কোটি ডলার। তাদের রপ্তানি কমেছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। মেক্সিকো ৩৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।