মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে আগ্রহী ভারতমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন: মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে এই আগ্রহের কথা জানায় প্রতিবেশী দেশটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর আওতায় মাটি ভরাটকরণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে রাস্তা নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস, নিরাপত্তা স্থাপনা, গ্যাস, বিদ্যুত্, পানি সরবরাহ অবকাঠামো নির্মাণ ও নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও অঞ্চলটির দোরগোড়ায় ডেটিকেটেড ৩৩ কেভি বিদ্যুত্ লাইন, পানি সরবরাহ, গ্যাসলাইন নির্মাণ ও অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। ফলে প্রস্তাবিত ভারতীয় ঋণের অর্থ দিয়ে ভারতীয় এসইজেডের অবকাঠামো উন্নয়ন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ কাজে ৮০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলের আশপাশে ১০০ একর ভূমির ওপর ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হবে। মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ইছাখালী চরের ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এর দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার। ভারতীয় ঋণের অর্থ দিয়ে ভারতের জন্য ১০০ একর ভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) এ জন্য ১০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ভারতের মিরসরাইয়ে বতর্মান অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গেই নির্দিষ্ট করে ৫৪ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। এর জন্য অবকাঠামোর উন্নয়নে ঋণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে বর্তমানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এবং মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আরেকটি প্রকল্পে ইতিমধ্যে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সম্মতি আদায় হয়েছে। দ্বিতীয় এলওসি ঋণের আওতায় এতে ভারত ৯ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে শুধুমাত্র মিরসরাইতে ভারতীয় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও খুলনার মংলাতে আরও দুটি ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে ওই দুটি অঞ্চলে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি দিচ্ছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারতের সহায়তায় বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। অন্যদিকে মংলাতে রয়েছে অন্যতম বন্দর। তাই এই দুই অঞ্চল থেকে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলও বিশেষ সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেজা সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভারতের কাছে তৃতীয় এলওসি আওতায় ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।
বেজা সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ইতিমধ্যে ৭৪ টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবস্থানগত দিক থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চর, সরকারি খাস জমি এবং বিচ্ছিন্ন নদী এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় হওয়ায় অবকাঠামো উন্নয়নে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ অর্থ ভারত থেকে ঋণ হিসাবে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও পায়রা বন্দর ও সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন এ জোনে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়ক, বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সরবরাহ করতে হবে। এ কাজেও ভারত থেকে ৮০০ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।