ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের রফতানি খাতে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মাছ ও তৈরি পোশাকের বড় বাজার রয়েছে। ব্রেক্সিট গণভোটের প্রভাবে এ দুই খাতেই দেশের রফতানি আয় কমতে দেখা গেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এ চিত্র ফুঠে উঠেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের বাজারে বিভিন্ন পণ্য রফতানি বাবদ দেশের মোট আয় হয়েছে ২২৯ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয়ের পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে মোট রফতানি আয় বছরওয়ারি কমেছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাছ যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়। জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে এ বাজারে মাছ রফতানি বাবদ দেশের আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার ডলার (প্রায় ৫০০ কোটি টাকা)। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ডলার বা ৫৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাজ্যে মাছ রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় কমেছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
মাছের মতো যুক্তরাজ্যে পোশাক রফতানি বাবদ আয়ও কমেছে। প্রথম আট মাসে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ২২৭ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে এ আয় ছিল ২১১ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। খাত ও রফতানি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা দুর্বল হতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশটিতে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটিশ আমদানিকারকদের এখন অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, যার প্রভাবে এখন অনেকেই আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটেনের আমদানিতে পতন ও মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণে সে দেশে পণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোর আয় কমেছে।
ইপিবি তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের বাজারে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় তৈরি পোশাক। গুরুত্বপূর্ণ অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য ও মাছ, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য, বাইসাইকেল ও অন্যান্য।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘সব খাতের বিষয়ে বলতে পারব না, তবে মাছ রফতানি বাবদ যুক্তরাজ্য থেকে আয় কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বেক্সিট।’ বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ১ পাউন্ডের বিপরীতে এক বছর আগেও পাওয়া যেত ১২৮ টাকা। বর্তমানে পাচ্ছি ৯৫ টাকা। মুদ্রা অবমূল্যায়নের এ অবস্থার মূল কারণ ব্রেক্সিট। সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হওয়ার সময় থেকেই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে ক্রয়াদেশের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। গোটা ইউরোপেই এমন মন্দাভাব চলছে।
পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইউরোর অবমূল্যায়ন হয়েছে। আবার ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের বাজারে মূল্য সংকোচন ঘটেছে। এভাবে যুক্তরাজ্যসহ গোটা ইউরোপে প্রতিযোগী সক্ষমতা হারাচ্ছি আমরা।
রফতানিকারকরা বলছেন, রফতানিমুখী খাতগুলো এখনো বহুমুখী হয়ে উঠতে পারেনি। মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। পণ্যটির রফতানি কমে গেলেই মোট আয়ে প্রভাব পড়ছে। যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়া। আর এ রফতানিতে পতনের মূল কারণ ব্রেক্সিট।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কমে গেছে। গত বছর আমরা ইউরোর দরপতন মোকাবেলা করেছি। এবার পাউন্ডের দরপতন মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বেক্সিটের মতো ঘটনা এ পরিস্থিতিকে আরো উসকে দিয়েছে।