জে সি পেনি, সিয়ার্স, কেমার্ট, মেসিস, আমেরিকান অ্যাপারেলের মতো পোশাকের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের বেশ কিছু স্টোর বা বিক্রয়কেন্দ্র চলতি বছরের মধ্যে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস টুডে, ডেটন ডেইলি নিউজ, ক্লার্ক ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চলতি বছর স্বনামধন্য অনেক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের তিন হাজারের মতো বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে।
এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিক্রয়কেন্দ্রই পোশাক বিক্রেতা ব্র্যান্ডের। মূলত আর্থিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো যেসব বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করছে তার অধিকাংশই নিজেদের দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। আর এই যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। অবশ্য এই বাজারে মন্দা চলছে, রপ্তানি কমে গেছে।
গত বছর ৫৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জে সি পেনি গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ১ হাজার বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১৪০টি বন্ধের ঘোষণা দেয়। শেষ পর্যন্ত চলতি মার্চের মাঝামাঝি ১৩৮টি বিক্রয়কেন্দ্রের নাম প্রকাশ করে তারা। এসব বিক্রয়কেন্দ্র জুনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ৬ হাজার কর্মী সমস্যায় পড়বেন। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের প্রক্রিয়া হিসেবে এপ্রিল থেকে ব্যাপক মূল্যছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করবে তারা। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে জে সি পেনির পণ্য বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়। জানুয়ারিতে এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানকে মুনাফায় ফেরাতে ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় জে সি পেনি।
জে সি পেনি পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক কেনে প্রতিষ্ঠানটি। জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী পোশাকের ব্যবসা কমছে। তারই ধারাবাহিকতায় বড় ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা আসছে। কারণ একেকটি বিক্রয়কেন্দ্রে কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে ব্র্যান্ডগুলোকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। আর যেহেতু বিক্রয়কেন্দ্রের সঙ্গে পোশাক উৎপাদনের বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত, তাই বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হলে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান সিয়ার্স হোল্ডিংস করপোরেশন তাদের দুই ব্র্যান্ড সিয়ার্স ও কেমার্টের ১৫০টি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
বছরে ১০০ কোটি ডলার খরচ বাঁচাতে এমন পরিকল্পনার কথা গত ১০ ফেব্রুয়ারি জানিয়ে দেয় সিয়ার্স। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদক ব্র্যান্ড আমেরিকান অ্যাপারেল ঋণখেলাপি হয়ে যায়। পরে কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গিলডান অ্যাকটিভওয়্যার ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ব্র্যান্ডটির স্বত্ব ও কিছু সম্পদ নিলামে কিনে নেয়। বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এসবের বাইরে থাকলেও আমেরিকান অ্যাপারেল বলছে শিগগিরই তারা ১১০টি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। অন্যদিকে খুচরা বিক্রির চ্যালেঞ্জে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ছেঁটে ফেলতে চায় মেসিস। গত আগস্টে ৭৩০টি বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১০০টি বন্ধের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধ হচ্ছে ৬৮টি।
গত জানুয়ারিতে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। ৬৩টি শিগগিরই বন্ধ হবে। বাকি ২টি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে। জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এত দিন পোশাকের দাম কম দিচ্ছিলেন। তারপরও ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছিল। এখন ক্রয়াদেশই কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি এমনিতেই কমের দিকে ছিল। এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্টোর বন্ধের ঘোষণা আমাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েই আসছে।’