কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা দুটি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষতিপূরণ প্রাতিষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাস্তবায়নের পাশাপাশি এ লক্ষ্যে শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে জাতীয় মানদণ্ড’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি উঠে আসে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিল্স) ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) যৌথভাবে এ প্রস্তাব উঠে আসে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বাস্তবসম্মত সুপারিশ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিল্স আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত রয়েছে। আবার যেসব শিল্প রয়েছে, সবার আর্থিক সঙ্গতি এক নয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে।
দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণের এ অর্থ খুবই অপ্রতুল বলে দীর্ঘদিন থেকেই শ্রমিক নেতারা কথা বলে আসছেন। ইস্যুটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। তবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কেবল ওই ইস্যুতে ক্ষতিপূরণের একটি মানদণ্ড ঠিক করা হয়। তাতে নিহত শ্রমিকদের সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা ও আহতদের ক্ষতির ধরন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। ওই অনুযায়ী রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাজরীনের শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একই মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়। এরই ভিত্তিতে বিল্স উপস্থাপিত ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়।
সভায় বক্তারা ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সচেতনতা জোরদার, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণে ত্রিপক্ষীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণের ওপর জোর দেন। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনার সংবাদ নিয়মিত মনিটরিং করা, নিয়োগপত্র প্রদান নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা, বীমা ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া, অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো, আয় ও জীবদ্দশার আনুপাতিক হারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণসহ সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় আনার দাবি জানান।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি জাতীয় মানদণ্ড হওয়া উচিত। তবে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের নামে অবাস্তব সুপারিশ করলে হবে না। বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ তহবিলে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ১০ বছর আগেও এ বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করিনি। তবে এখন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে মানদণ্ড নির্ণয় করতে হবে। কারণ সরকারেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বিলেসর ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ডা. এ এম এন আনিসুল আউয়াল, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, বিলসের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রায় রমেশ চন্দ্র, নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন, মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।