বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারা বলেছেন, রানা প্লাজা ধসের পর এ দেশের পোশাক খাত পরিচ্ছন্ন সংস্কার অগ্রগতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছেন উদ্যোক্তারা। তবে সে বিবেচনায় পোশাকের ন্যায্য দর দিচ্ছে না ক্রেতারা। এ বিষয়ে তাদের অবশ্যই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তিন দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ইইউর এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তারা। ঢাকায় ইইউ দূতাবাস কার্যালয়ে এই ব্রিফিংয়ে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা ইইউ পার্লামেন্টের প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব সোস্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্রেটস (এসঅ্যান্ডডি) গ্রুপের উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডা ম্যাকআভান বলেছেন, তৈরি পোশাকের কল্যাণে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে। শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা গেলে আরও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ দেশের।
বাংলাদেশকে দেওয়া জোটের জিএসপি পর্যালোচনার অংশ হিসেবে শ্রম পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি গত সোমবার ঢাকায় আসে। এই দলে রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও শ্রম প্রতিনিধি রয়েছেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তারা। পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি জানতে কারখানা পরিদর্শন এবং এ খাতের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা।
পোশাক খাতের উন্নয়নে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকেও (ইপিজেড) অভিন্ন শ্রম আইনের আওতায় আনা, এ জন্য শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করা এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে অন্তত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষর থাকার বাধ্যবাধকতা বাতিল করার কথা বলেছেন তারা। এ ছাড়াও সংশোধিত শ্রম আইনের আরও সংশোধনী আনার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিনিধি দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের অন্য তিন সদস্য আরনা লির্টজ নোবার্ট নয়সার, অ্যাগনেস জনজেরাস ছাড়াও ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক মিরান আলী ও মোহাম্মদী গ্রুপের এমডি রুবানা হক উপস্থিত ছিলেন। সরকারকে চাপে রাখতেই ইইউ শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়নে এ দেশে
এসেছে কি-না_ এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ৫৪টি স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের সঙ্গে ইইউর শুল্কমুক্ত সুবিধা কাঠামো চুক্তি রয়েছে। এটা কেবল ইইউর একার বিষয় নয়। চুক্তিবদ্ধ সব দেশেই নিয়মিত পর্যালোচনা হয়। কোনো দেশের সরকারকে চাপে ফেলার কোনো সুযোগ কিংবা উদ্দেশ্য নেই।
বাংলাদেশের সম্প্রতি জঙ্গি-সন্ত্রাস সম্পর্কিত অপর প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধি দলের সদস্য এসঅ্যান্ডডির কো-রিপোর্টার আরনা লির্টজ বলেন, সন্ত্রাস শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। ইউরোপেও বার বার এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার সুযোগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সিভিল সোসাইটির স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন।