বিশ্বের তৃতীয় প্রধান ভোক্তা বাজার রাশিয়া। দেশটিতে শুধু পোশাকের বাজারই ৭০০ কোটি ডলারের। এ খাতের দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ সম্ভাবনা খুব কমই কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। তবে ইউরোর দর পতনে ইউরোপের রফতানিতে কম মুনাফা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসাসহ বিভিন্ন কারণে বিকল্প বাজার হিসেবে রাশিয়ায় রফতানি বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ায় পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫২ শতাংশ। আগের একই সময়ের ১০ কোটি ডলার থেকে রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ডলার।
রাশিয়ার মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ১১ দেশের জোট কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস (সিআইএস) বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলারের রফতানি বাজার সিআইএস জোট। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়াও বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে না। বরং সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আদায় করে থাকে। বিভিন্ন শুল্ক আধা শুল্ক মিলে বর্তমানে পণ্য ভেদে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ দাঁড়ায় এ হার। অথচ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) থাকায় ভারত রাশিয়ায় রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এরকম অসম প্রতিযোগিতা না থাকলে রাশিয়ার বাজার সম্ভাবনা ভালোভাবে কাজে লাগানো যেত বলে মনে করেন রফতানিকারকরা। উচ্চ শুল্ক ছাড়াও ব্যাংকিং চ্যানেল না থাকায় রফতানি প্রক্রিয়া অনেক জটিল।
রাশিয়ায় তৈরি পোশাকের নিটের (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) চাহিদা বেশি। নিট খাতের রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, রাশিয়া বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) সদস্যপদ পাওয়ার পর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নিট পোশাক রফতানিকারকদের একটি প্রতিনিধি দল দেশটির বাজার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে যায়। সে দেশের ফেডারেল কাস্টমস ইউনিয়ন, রাশিয়ান এবং মস্কো চেম্বার এবং স্থানীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি তোলা হয়। তখন রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশ পেতে পারে; তবে দু’দেশের সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হতে হবে। ওই সফর শেষে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের জানানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এতদিনেও উল্লেখ করার মতো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে উচ্চ শুল্কের ফাঁদে আটকে আছে রফতানি সম্ভাবনা। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় অথবা এফটিএ কিংবা কোনো ধরনের চুক্তির আদলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলে রাশিয়ার পোশাকের চাহিদার বড় অংশ পূরণের সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ায় গত ৮ মাসে নিট খাতের রফতানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। আগের একই সময়ের ৬ কোটি ডলার থেকে বেড়ে রফতানি হয়েছে ৯ কোটি ডলারের পণ্য। অন্যদিকে তৈরি পোশাকের ওভেন (শার্ট-প্যান্ট) রফতানি থেকে আয় এসেছে ৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ১২ কোটি ডলার। রাশিয়ায় পোশাকের বাইরে চামড়া পণ্য, সিরামিক, প্লাস্টিক, ফার্নিচার ইত্যাদি রফতানি হয়ে থাকে।