দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ নেয়া ৩ হাজার গার্মেন্ট এখন বন্ধ। এর বেশির ভাগ গার্মেন্টের কোনো অস্তিত্বই নেই। উধাও হয়ে গেছে। সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ না দিয়ে কয়েকশ’ উদ্যোক্তা সটকে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাধ্য হয়ে ইতিমধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করতে হয়েছে। বাকি টাকার ভবিষ্যৎও একই পথে এগোচ্ছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কম-বেশি সব ক’টি ব্যাংক। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় ৩৫টি ব্যাংক। অথচ গোপন কমিশন ভাগাভাগির মাধ্যমে যারা চরম অনিয়ম করে এসব ঋণ দিয়েছেন তাদের কিছুই হয়নি। খেলাপিরাও আছেন বহাল তবিয়তে। অনেকে যে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন সেখানে ঋণের ১০ শতাংশ টাকাও বিনিয়োগ করেননি। ঋণের টাকায় অন্যত্র ভিন্ন নামে শিল্প গড়ে তুলেছেন কিংবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা দিচ্ছেন না। এভাবে মুষ্টিমেয় কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির কারণে ব্যাংক ও গার্মেন্ট খাতে ব্যাপক ক্ষতি বয়ে এনেছে। যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে গার্মেন্ট খাতের এ রকম বেহালচিত্র বেরিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতে সরকারের ভুল পলিসির কারণে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শুধু দর্জির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কেননা এ শিল্পে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। উপরন্তু এসব ঋণ দুর্নীতি এ খাতকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমছে না। ব্যাংকগুলো এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে উচ্চ সুদ আরোপ করে। আর উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বেশির ভাগ শিল্প কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পুরো অর্থনীতির ওপর।
সূত্র জানায়, ব্যাংকভেদে ১০ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয় পোশাক খাতে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) দাবি অনুযায়ী এ খাতে গড় বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ। এ হিসাবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গার্মেন্ট খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে পোশাক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬.৭১ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ১৫ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। যে কারণে আদায় অযোগ্য ঋণ হিসেবে ৭ হাজার ৭২ কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে। বাকি ১০ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকাও আদায় হবে না ধরে নিয়ে নিকট-ভবিষ্যতে অবলোপন করা হবে।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ২০০৮ সালের তথ্য মতে, দেশে পোশাক কারখানা ছিল ৫ হাজার ৬০৮টি। হালনাগাদ তালিকায় তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১১০টিতে। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ কারখানার সংখ্যা ২৪৯৮টি। এ খাতের অপর সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) তথ্যানুযায়ী ২০১৫ সালেই ২২০টি নিটওয়্যার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে গত এক দশকের বেশি সময়ে নানা কারণে বন্ধ হয় আরও আড়াই শতাধিক কারখানা। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিবিশেষের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাই এর জন্য দায়ী। ব্যাংকগুলোয় বিপুল মন্দ ঋণের সৃষ্টি সেই পুঞ্জীভূত প্রভাবের ফসল। সেটিও একসময় অবলোপন করতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিশ্বজুড়েই এমনটি হচ্ছে। বাংলাদেশেও ঘটছে। সারা বিশ্বে পুঁজিবাদী অর্থনীতির দাপট এর নেপথ্য কারণ। যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খোলাবাজার ও পুঁজিবাজারে কিছু সুযোগসন্ধানী লোক সৃষ্টি করা। বিনিয়োগের নামে উদ্যোক্তা সেজে এরা আত্মপ্রকাশ করে। নানা কায়দায় ব্যাংক ঋণ পকেটস্থ করতেও এরা সিদ্ধহস্ত থাকে। এরপর উৎপাদনে থাকার ভান করে সুযোগ বুঝে একসময় লোকসানের অজুহাতে সটকে পড়ে।’ তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা মেরে দিতে এভাবে তারা ঋণ নিয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শুধু তৈরি পোশাক নয়, সব খাতেই ঋণ পরিশোধ না করার রীতি দেশে একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ার কারণেই এমনটি ঘটছে। রাজনৈতিক প্রভাবেও কিছু ঋণ যাচ্ছে। ফলে দিন দিন আদায় অযোগ্য ঋণও বাড়ছে, যা ঋণ অবলোপনের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের চলমান এ পরিস্থিতিকে তিনি উদ্বেগজনক বলেও দাবি করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যহারের মাধ্যমে দেয়া এসব ঋণের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি করতে না পারলে আর্থিক খাতে এ দুর্বৃত্তপনা বন্ধ হবে না।
পোশাক খাতে খেলাপি ঋণের প্রায় পুরোটাই মন্দঋণে পরিণত হয়েছে। সংকট নিরসনে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ঋণ পুনর্গঠন বা সহজ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগও করে দেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঋণ আদায় হয়নি। একপর্যায়ে লোকসানের বোঝা কমাতে আমানত হিসাবের স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। যাকে সহজে বলা হয়, লোকসান বা পুঁজি ঘাটতি। সরকারি ব্যাংকগুলো এ ঘাটতি মিটিয়ে থাকে সরকারি তহবিল থেকে টাকা নিয়ে, যা জনগণের দেয়া ট্যাক্সের পয়সা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো এসব ঘাটতি মিটিয়ে থাকে ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা রকম সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে। এদিকে এটি করতে গিয়ে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর গড়ে ২৫ ভাগ মূলধন বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হচ্ছে, যা ‘প্রভিশন’ নামে পরিচিত। এতে করে ব্যাংকগুলো প্রভিশনে রাখা অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে না। ফলে ব্যাংক তার ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শেষমেশ এসব লোকসানের বোঝা টানতে হবে সাধারণ গ্রাহকদের।
জানা গেছে, কারখানা স্থাপন, সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রফতানি পরিচালনার কাজে বিভিন্ন ব্যাংক এসব গার্মেন্ট কারখানায় অর্থায়ন করে। কিন্তু গুটিয়ে নেয়ার আগে কোনো মালিক ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেননি। কারণ তাদের অনেকেই ব্যবসা থেকে বের হওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। ওদিকে ব্যাংক কর্তারা জেনেশুনেই এসব দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছেন। বিনিময়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অলিখিত কমিশন। আর যারা ঋণ নিয়েছেন তারাও টাকা পরিশোধ না করার নিয়তে ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে উদ্যোক্তা ঋণের বিপরীতে যে বন্ধকি সম্পদ দেখিয়েছেন এখন তার সঙ্গে প্রকৃত সম্পদের কোনো মিল দেখা যাচ্ছে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে দিয়েও ৫ ভাগ ঋণ আদায় হচ্ছে না।
অবশ্য সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও আছে। যারা কম ঘুষে ঋণ নিয়ে সত্যিকারার্থে ব্যবসা করতে চেয়েছেন তাদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারেনি প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে। এছাড়া উচ্চ ভ্যাট-ট্যাক্স ও শুল্ক হার বসানোসহ কাস্টমসের নানা ধরনের হয়রানি তো আছেই। সেই সঙ্গে দফায় দফায় পরিবহন ব্যয় ও মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অথচ পোশাকের দাম বাড়ানো নিয়ে ক্রেতাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। উল্টো তারা এখানে কমপ্লায়েন্সের নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স সংগঠনের পাহারা বসিয়েছে। তারা শ্রমিকদের উসকানি দেয়া ছাড়াও যেনতেন ছুতেই নেতিবাচক রিপোর্ট দিয়ে থাকে। গার্মেন্ট মালিকরা তাদের কমপ্লায়েন্স তালিকা পূরণ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলছেন। কিন্তু সেভাবে ফল মিলছে না। এ রকম ফাঁদে পড়েও অনেকে পুঁজি হারিয়ে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ঋণ খেলাপিদের তালিকায় এ রকম সংখ্যাও একেবারে কম নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক খাতের অনাদায়যোগ্য খেলাপি ঋণের হার যদি ৩ শতাংশের বেশি হয় তাহলে ব্যাংকিং খাত পর্যাপ্ত মূলধন সংকটে থাকে। কিন্তু বাস্তবে সেটি এখন ১৬ শতাংশ। সঙ্গতকারণে সংকটের মাত্রাটা সহজে অনুমান করা যায়।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, বন্ধ কারখানাগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর কী পরিমাণ ঋণ আটকে আছে তা জানেন না তিনি। তবে দাবি করেন, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে প্রতিদিনই ২-৩টি কারখানা বন্ধ হচ্ছে।
বিকেএমইএর সাবেক ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সচল কারখানার খেলাপি ঋণ কিংবা আদায় অযোগ্য ঋণ নেই বললেই চলে। এ খাতে মন্দ ঋণের যে ফিরিস্তির কথা বলা হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশই উৎপত্তি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে পড়া কারখানাগুলোর জন্য।’ বাস্তবসম্মত কারণেই এদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে অনেক ভালো উদ্যোক্তার ভিড়ে সুযোগ সন্ধানী কিছু খারাপ উদ্যোক্তাও এ সেক্টরে ঢুকে পড়ছে। যারা মজা লুটে সময় বুঝে চলেও গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, মাদার টেক্সটাইল, মাদারীপুর স্পিনিং, বেনটেক্স, ফেয়ার গ্রুপ, রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইলসহ ভুঁইফোড় শত শত প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নামমাত্র বন্ধকীতে ঋণ দিয়েছে বেশ কিছু ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়া ঋণের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে। দুর্বল অনেক প্রতিষ্ঠানকেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঋণ দেয়া হয়। সাভারের দুর্ঘটনাকবলিত রানা প্লাজা ভবনে থাকা পাঁচটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতেও বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল। তথ্য মতে, ইথার টেক্স, নিউওয়েভ, নিউওয়েভ বটমস, নিউওয়েভ স্টাইল, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেডে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ইথার টেক্স লিমিটেড সরকারি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পুরনো ঋণ শোধ না করায় লেনদেন আগে থেকেই বন্ধ ছিল। ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড বেসরকারি একটি ব্যাংকের লোকাল শাখার মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা প্রায় ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোয়ান, লিরিক, আরএম ফ্যাশন, মিফকিফ, বনী, লিবার্টি গার্মেন্ট, লিবার্টি ফ্যাশন ও ফাহিম লুম, আম্বিয়া গার্মেন্ট, সানম্যান টেক্সটাইল, মেনস্ অ্যাপারেলস, ডে অ্যাপারেলস, ডে ফ্যাশন ও বায়েজিদ ড্রেসেস, আরএসআই অ্যাপারেলস, কেন্ট অ্যাপারেলস ও শাহচাঁন অ্যাপারেলসসহ অসংখ্য কারখানা বন্ধ হলেও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। এভাবে দেশে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৩৫টি ব্যাংক পোশাক খাতে ঋণ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ ফিনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০১৬ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশ মন্দ ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এদের মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ দশমিক ৬২ শতাংশই আদায় অযোগ্য। টাকার অংকে এর পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক খাতের রয়েছে চার হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ খাতে বিশেষায়িত ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ৭৯২ কোটি টাকা। বেসরকারি বাণিজ্যিক সবক’টি ব্যাংকের পোশাক খাতে ছাড়কৃত ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ রয়েছে তিন হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। বিদেশী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে এ খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে খেলাপির মেয়াদ পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ঋণ অবলোপন করতে বাধ্য হয়েছে এমন মন্দ ঋণের পরিমাণ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি, বিদেশী এবং বিশেষায়িত ব্যাংক মিলে আরও সাত হাজার ৭২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব, ঋণ ছাড়ে রাজনৈতিক প্রভাব, আদায়ে অমনোযোগী এবং ঋণ বিতরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনে করেন, এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর অলসতা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি কাজী মশিহুর রহমান দাবি করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণেই ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণ সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে ব্যাংকারের দায় থাকে না। কারণ কোনো ব্যাংকার ইচ্ছে করলেই পছন্দসই কাউকে ঋণ দিতে পারে না। তাকে ব্যাংকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। একই সঙ্গে যে শাখা ঋণ দিচ্ছে, তার আদায়ও নিশ্চিত করতে হয় ওই শাখাকেই। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এত বেশি ঋণ দিয়েছে, সেখানে আনুপাতিক একটা অংশ খেলাপি বা আদায় অযোগ্য হতেই পারে। একটি ব্যবসায় সবাই সফল হয় না। এটাও মনে রাখতে হবে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ঋণের টাকা পুনরায় ব্যাংকে ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে যাকে ঋণ দেয়া হয়েছে সে ব্যবসায় টিকে আছে কি-না তার ওপর। যে ব্যবসায় নেই, তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফেলেছে অথবা পালিয়ে গেছে ওই টাকা কার কাছ থেকে আদায় করবে? এর দায় ব্যাংককেই নিতে হয়।