গত সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসহ চারটি বড় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। এত দুর্যোগ আর ঝুঁকির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত সমৃদ্ধি লাভ করছে। গতকাল রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব ও ডেইলি স্টারের যৌথ আয়োজনে ‘২০১৩ পরবর্তী গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের সমস্যা এবং প্রাপ্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন। সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহার।
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টারের সহযোগী সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহেদুল আনাম খান, নারী উদ্যোক্তা ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. আনোয়ারুল হক শরীফ, বিআইএসির চিফ এক্সিকিউটিভ ড. তৌফিক আলী, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসহ চারটি বড় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। এত দুর্যোগ আর ঝুঁকির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত সমৃদ্ধি লাভ করছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে পোশাক খাত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ করার পর প্রথম বিপর্যয় আসে। সে সময় অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের টিকে থাকা কষ্টকর হবে। দ্বিতীয় বিপর্যয় ছিল বাংলাদেশের পোশাক খাত শিশুশ্রম মুক্ত করা। এরইমধ্যে তারও যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০০৮-০৯ সালে যখন বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিল তখন অনেকেই বলেছেন বিশ্ববাজারে পোশাকের দাম কমে যাবে। চাহিদা বেড়ে গেলে এ ধাক্কা পোশাক খাত সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু পোশাক খাত সে ধাক্কাও সামলে নিয়ে উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বলেছেন। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যা পোশাক শিল্পের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।
তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সর্বদা একটি বৈশ্বিক ঝুঁকির মধ্য থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসেবে টিকে রয়েছে। বাস্তব এ ঝুঁকির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আরো বাড়বে। পুরনো ঝুঁকি চলে যাবে, নতুন ঝুঁকি আসবে। এ ঝুঁকির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বিকাশ লাভ করবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত টিকে থাকার মতো যোগ্যতা দেখিয়েছে। বৈশ্বিক বিবর্তনশীল, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য পোশাক খাত প্রতি মুহূর্তে কাঠামো ও নীতিগত সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। এ খাতের শক্তিশালী দিক হলো, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের দ্বারা সৃষ্টি। দেশীয় উদ্যোক্তার ফলে দেশের অভ্যন্তরে থেকে সংস্কার, পরিবর্তন করে এ খাতকে টিকিয়ে রেখে উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখছে। এ খাতের সুরক্ষা, উন্নতমান, পরিবেশ ও নীতি কাঠামো পরির্বতন করা গেলে উত্পাদন অনেক বেড়ে যাবে। উত্পাদন বেড়ে গেলে এ খাতের শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাও বাড়বে। এতে মালিকদেরও মুনাফা বেড়ে যাবে।
বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে সংস্কার, আধুনিকায়ন ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন মানতে গিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট কারখানাগুলো। সংস্কার, আধুনিকায়ন করতে গিয়ে কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই, পুঁজি হারিয়ে ফেলছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তা হারিয়ে যাওয়া এ খাতের জন্য বড় একটি সমস্যা। এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। পোশাক খাতের সমস্যা নিরসনে এ খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি সামাজিক সংলাপ প্রয়োজন। অর্থবহ এ সামাজিক সংলাপ শুধু সরকার, পোশাক শিল্প মালিকদের দিয়ে হবে না। পোশাক খাতের ক্রেতা, ব্যবহারকারী, রফতানিকারকসহ সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে। কাঠামো ও প্রক্রিয়াজাতের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি দেখতে হবে।