গত তিন বছর আগে সরকার গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ করেছে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা। তবে দেশে এখনো ১০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানা এটি অনুসরণ করেনা। কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের কমপ্লায়েন্স রিপোর্টে এমন তথ্য জানা গেছে। আলোচ্য সময়ে ৮৮৮টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯৩টি বিজিএমইএর সদস্য ও ১২০টি বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানা। এ দুটি সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে ১৭৫টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন হওয়া বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ৫৯৩টি মধ্যে ৯২ শতাংশ কারখানা সরকার নির্ধারিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ করে। অর্থাত্ এ সংগঠনের বাকী ৮ শতাংশ কারখানা সরকার নির্ধারিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ করে না। বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত ১০ শতাংশ কারখানা এটি অনুসরণ করে না। অন্যদিকে এ দুটি সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানা এ তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ১৭ শতাংশই সরকার নির্ধারিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ করে না।
অবশ্য বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত শতভাগ কারখানাই সরকার নির্ধারিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ করে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, কারখানাগুলো শ্রমিকের ইন্সুরেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে বিজিএমইএ’র কাছে শ্রমিকের তালিকা পাঠাতে হয়। সেখানে শ্রমিকের মজুরি উল্লেখ থাকে। কোন কোন কারখানা সরকার নির্ধারিত মজুরি অনুসরণ করে না – তা আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে জানালে ব্যবস্থা নেব।
ডিআইএফই প্রতি ছয় মাস পর পর কারখানার কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এর বাইরে বিজিএমইএও আলাদভাবে কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে বিজিএমইএ কেবল তাদের সংগঠনের সদস্যভুক্ত প্রায় তিন হাজার ২শ’ প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় নেয়। আর ডিআইএফই’র প্রতিবেদনে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও এ দুটি সংগঠনের সদস্য বহির্ভূত কারখানাকেও বিবেচনায় নেয়। কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে ২৬টি বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়। এর মধ্যে কারখানার ভবনের কাঠামো ছাড়াও অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুও যুক্ত রয়েছে। দেশে গার্মেন্টস কারখানার প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে রপ্তানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, এমন কারখানার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বলে ধারণা করা হয়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের দুটি সংগঠনের সদস্য বহির্ভূত কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্সে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে। এ ধরনের ১৭৫টি কারখানার মধ্যে ‘এ’ গ্রেডভুক্ত কারখানার সংখ্যা মাত্র ১৬টি। ‘বি’ গ্রেডভুক্ত কারখানা ২০টি আর ‘সি’ গ্রেডভুক্ত কারখানা ১৩৯টি। কমপ্লায়েন্সে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা কারখানাগুলো ‘সি’ গ্রেডভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করে না – এমন কারখানাও প্রায় ১০ শতাংশ। এছাড়া ২৪ শতাংশ কারখানা এখনো শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয় না। শ্রমিক/কর্মচারীদের ছবিসহ পরিচয়পত্র না দেয়া কারখানা ২৭ শতাংশ, চাকরিবহি সংরক্ষণ করে না ৩৪ শতাংশ, হাজিরা কার্ড সংরক্ষণ করে না ১৮ শতাংশ, ছুটির বিধান অনুসরণ করা হয় না ২১ শতাংশ কারখানায়, প্রসূতি কল্যাণ ছুটি ও ভাতা প্রদান করে না ৩৫ শতাংশ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডে কেয়ার সেন্টার নেই অর্ধেক কারখানায়, প্রাথমিক চিকিত্সার ব্যবস্থা নেই ৩৮ শতাংশ কারখানায়।
কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের বিকল্প হিসেবে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে অংশগ্রহণমূলক কমিটির বিধান রয়েছে শ্রম আইনে। তবে ডিআইএফই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনো ৫৫ শতাংশ কারখানায় এ ধরনের কমিটি গঠন হয়নি। অন্যদিকে প্রায় ৯৭ শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই।