দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আর বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান রয়েছে ১১ ভাগ। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির হাত ধরেই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। এজন্য এ খাতটিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এক সঙ্গে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যর্থ হলে যা না ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় একজন বড় উদ্যোক্তা ব্যর্থ হলে। সে কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আরও বাড়াতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদানের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় ১২তম সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার পেলেন ১২ জন। পুরস্কৃত করা হয়েছে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানকে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাতে এসব পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সিটি ব্যাংক, এনএ’র বাংলাদেশের সাব-ক্লাস্টার প্রধান জেমস মোরো, সিটি বাংলাদেশের কান্ট্রি অফিসার রাশেদ মাকসুদ, সাজেদা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাহিদা ফিজ্জা কবির, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতের বিনিয়োগে জোর দিতে হবে। তাহলে প্রবৃদ্ধি এবারও ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, এসএমই একটি বড় খাত। এ খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য দ্রুত একটি গবেষণা সেল গঠন করতে হবে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে শুধু এনজিওগুলো কাজ করছে, এ দাবি সঠিক নয়। এর পেছনে সরকারও কাজ করছে। এক সময় এনজিওগুলো বন্ধের দাবি উঠেছিল। তখন সরকার তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার-এনজিও মিলেমিশে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থনীতি। গত কয়েক বছরে এসব উদ্যোক্তাদের পুঁজি ও আকার সমানতালে বেড়েছে। ফুটপাতে বসে একই পণ্য ভাগাভাগি করে যারা বিক্রি করেন, তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নয়; জিডিপিতে তাদের অবদান নেই। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ে জিডিপিতে অবদান রাখছে। বর্তমানে সারা দেশে এ ধরনের প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন। এরা কোনো না কোনোভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের কাজে নতুনত্ব রয়েছে। কেউ কেউ লোকালি পণ্যের ব্র্যান্ডিং করেছেন। সে কারণে এটা ফুটপাতের ব্যবসা নয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি কীভাবে দেয়া যায়-তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
এস কে সুর চৌধুরী বলেন, গত সাত বছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক সহায়তা দিয়েছে। এত দিন নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ নিতে পারতেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। সম্প্রতি সে সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। একই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তা ঋণের সুদের হারও কমানো হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে নারীরা ঋণ পাবেন।
সিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এবার শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ কৃষি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগে মোট ১২ জন উদ্যোক্তাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন নওগাঁর জিল্লুর রহমান, তার হাতে সাড়ে চার লাখ টাকার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই বিভাগে প্রথম রানারআপ বগুড়ার সাইদুজ্জামান সরকার দেড় লাখ টাকা ও দ্বিতীয় রানারআপ বরগুনার মো. আজিজুল হক সিকদার পেয়েছেন এক লাখ টাকা পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন মুন্সিগঞ্জের রুমা আক্তার। তার হাতে সাড়ে তিন লাখ টাকা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই বিভাগে প্রথম রানারআপ ঢাকার ফজিলাতুন নেসা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দেড় লাখ টাকা ও দ্বিতীয় রানারআপ চট্টগ্রামের রুবামা শারমিন পেয়েছেন এক লাখ টাকা। শ্রেষ্ঠ তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগে বিজয়ী হিসেবে সাড়ে তিন লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন আশুলিয়ার উদ্যোক্তা রুবেল দেওয়ান। এই বিভাগে প্রথম রানারআপ হিসেবে গাইবান্ধার নারী উদ্যোক্তা মোছা. রহিমা খাতুন দেড় লাখ টাকা পুরস্কার গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় রানারআপ হিসেবে এক লাখ টাকা পুরস্কার গ্রহণ করেন পাবনার বেড়া উপজেলার মো. তাইফুর রহমান। শ্রেষ্ঠ কৃষি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগে বিজয়ী সাতক্ষীরার সায়মা খাতুন সাড়ে তিন লাখ টাকা পুরস্কার লাভ করেন। প্রথম রানারআপ দিনাজপুরের মো. আলতাফ হোসেন এবং দ্বিতীয় রানারআপ হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করেন শরীয়তপুরের মো. নুরুল আমিন সরদার। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছে পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপিমেন্টেশন (পপি) এবং শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)।