যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি পেতে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তৈরি পোশাক উৎপাদন এবং রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ চাইছে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত তার দেশ থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাকে এ সুবিধা দিক। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটকে লেখা এক চিঠিতে বিজিএমইএ এ প্রস্তাব দিয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব-সংক্রান্ত একটি অবহিতকরণপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।
রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্ন দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিকের প্রাণহানিতে আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেয় ওবামা প্রশাসন। অবশ্য তৈরি পোশাক কখনও বাংলাদেশের জন্য জিএসপি তালিকায় ছিল না। সরকার, বিজিএমইএসহ নানা পক্ষ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) একাধিক সম্মেলনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। জিএসপি স্থগিত করার সময় স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নসহ বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত পূরণের কথা বলা হয়। সরকার ও উদ্যোক্তাদের দাবি, এসব শর্তের সবই পূরণ করা হয়েছে। এরপর তিন দফা শুনানির পরও বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। বিজিএমইএ এখন শর্তসাপেক্ষে হলেও জিএসপি পাওয়ার চেষ্টা করছে।
বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি হওয়া পোশাকে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি মার্কিন সরকার যেন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। বিশেষ বিবেচনায় এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ চিঠিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে আসছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনে
এসব তুলা ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান তুলা আমদানিকারক দেশ। মোট তুলা আমদানির একটি বড় অংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি হওয়া পোশাকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হলে দেশটি থেকে তুলা আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। বিজিএমইএর প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা এবং মার্কিন নতুন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে তুলে ধরার জন্য রাষ্ট্রদূতকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
বিজিএমইএর পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিএসপি নিয়ে নতুন করে তৎপরতা আপাতত বেসরকারিভাবেই করছেন তারা। এ প্রক্রিয়া একটা পর্যায়ে এগোলে অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসন প্রাথমিকভাবে সম্মত হলে পরে দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে বাকি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে। বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মূলত তৈরি পোশাককে অন্তর্ভুক্ত করে অন্য সব পণ্যের স্থগিত থাকা জিএসপি সুবিধাই পুনরুদ্ধার চান তারা। তবে সেটা যদি না দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার বিপরীতে তৈরি পোশাকে জিএসপি চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রফতানি ক্রমেই কমছে। বড় বাজার হিসেবে বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ বিবেচনা থেকেই নতুন করে জিএসপি নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন তারা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, এক সময় তৈরি পোশাকের মোট রফতানির ৩৮ শতাংশ আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চলতি বছরের গত আট মাস শেষে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এ হার এখন মাত্র ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। আড়াই বছর ধরে পোশাক রফতানি কমতে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে এক নম্বর আমদানিকারক দেশের তালিকায় উঠে আসে জার্মানি।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জিএসপি সুবিধায় পোশাক খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী ফার্মকে কয়েক দফা লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে। বিকেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, লবিস্ট নিয়োগে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে; কিন্তু পোশাককে জিএসপিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশের সব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। পোশাক রফতানিতে বর্তমানে পণ্যভেদে ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ রয়েছে।