চার বছর ধরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। আগামী বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও জোটটি তাদের কার্যক্রম গোটাবে, নাকি চালিয়ে যাবে—সে বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ। রব ওয়েজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরেই অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও বৈশ্বিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের অনেক বৈঠক হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
অ্যাকর্ডের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে গতকাল সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রব ওয়েজ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হবে না। অ্যাকর্ডের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স এবং জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) পোশাকশিল্পের সংস্কারকাজ তদারকি করছে। তবে আগামী বছরের পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাক, সেটি চায় না পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের অধীনে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়েছে। তাই ২০১৮ সালের পর তারা থাকবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মূলত সরকারি পর্যায়ে। তবে আমরা মনে করি, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সময়সীমা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। যদি তার আগে ডিআইএফইর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।’
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত যদি অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স থাকে, তবে বর্তমানের মতো চাই না আমরা। তিনটি আলাদা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। সেটির পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ব্র্যান্ড ও ইউনিয়নের প্রতিনিধি থাকবে। এ বিষয়ে সরকার, ব্র্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছি।’আগামী এক বছরের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হবে কি না, জানতে চাইলে বিজিএমইএর এই নেতা বলেন, ‘সংস্কারকাজ ৯৫ শতাংশ হলেই আমরা ধরে নেব সফল হয়েছি। কারণ, সংস্কারকাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়তই নতুন কারখানা যুক্ত হবে কিংবা পুরোনো কারখানায় নতুন ত্রুটির খোঁজ মিলবে।’
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে রব ওয়েজ জানান, অ্যাকর্ডের সদস্য ১ হাজার ৫৩৪টি তৈরি পোশাক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটির ৭৭ শতাংশ সংস্কারকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। চার শতাধিক কারখানার ৯০ শতাংশ ত্রুটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক পরিদর্শনে পাওয়া সব ত্রুটি সংশোধনের কাজ সম্পন্ন করেছে ৬৫টি পোশাক কারখানা। সব ধরনের সংস্কারকাজ শেষ করার সাফল্য অর্জন করেছে সাতটি কারখানা। অ্যাকর্ড বলছে, তাদের সদস্য কারখানার বৈদ্যুতিক ত্রুটি সংস্কার শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ। ৭১ শতাংশ অগ্নিসংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধন শেষ। তবে ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধন পিছিয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানা ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনের কাজ ৫৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ৭১টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যাকর্ড। এ ছাড়া প্রায় ৫৭৮টি কারখানাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে তারা। সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে এসব কারখানার সঙ্গেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে অ্যাকর্ড।