Home Bangla Recent গার্মেন্টসের ঝুট পুনরায় কাপড় হয়ে মানুষের গায়ে

গার্মেন্টসের ঝুট পুনরায় কাপড় হয়ে মানুষের গায়ে

মো. জুয়েল হোসেন, ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। চাকরি না পেয়ে শুরু করেন ব্যবসা। গার্মেন্টসের ঝুট (টুকরা কাপড়) কিনে এনে তা থেকে সূতা তোলা এবং সেই সূতা থেকে তাঁতীদের দিয়ে কাপড় তৈরি করে বিক্রির ব্যবসা। এ ব্যবসায় জুয়েল হোসেনের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। সঙ্গে নিজের ব্যবসায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পেরেছেন অনেককে। শুধু জুয়েল হোসেনই নয়, বগুড়ার আদমদিঘীতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ এ কাজের সঙ্গে জড়িত।

আদমদিঘীর সাঁওইল বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে প্রায় ১২০০ দোকান রয়েছে। যেখানে ঝুট থেকে সূতা তোলা এবং তা থেকে কাপড় বানানোর কাজ চলছে। যেসব ঝুট থেকে সূতা তোলা বা কাপড় বানানো যায় না, তা থেকে বানানো হচ্ছে দড়ি, সেটিও করা না গেলে বানানো হচ্ছে তুলা। এভাবে একেকটি দোকানে একেকটি কাজ চলছে নিরন্তরভাবে।

জানা গেছে, ১৯৮০-এর দশক থেকে বগুড়ায় এ কাজ শুরু হয়। তখন বিদেশিদের ব্যবহূত পুরোনো সোয়েটার থেকে সূতা খুলে কাপড় বানানোর কাজ হতো। পরে দেশিয় গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় থেকে সূতা খুলে কাপড় বানানোর কাজ শুরু হয়। সারা দেশের গার্মেন্টস কারখানা থেকে ঝুট সংগ্রহ করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এরপর সূতার সাদৃশ বিবেচনা করে কাপড় বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত এসব কাপড় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন বাড়িতে। বাড়িতে বসে নারীরা এসব কাপড় থেকে সূতা খুলে তা রিলে পেঁচান। ব্যবসায়ীরা তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে হাটে বিক্রি করেন। অনেকে সূতা থেকে তাঁতীদের মাধ্যমে কাপড় বানিয়ে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে সাধারণত, কম্বল, চাদর, ওড়না, সোয়েটার, মাফলার, তোয়ালে, গামাছা, বেড শীট এবং পর্দা তৈরি করা হয়। সাঁওইল হাটে সপ্তাহে দুইদিন (রবিবার ও বুধবার) হাট বসে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সূতা এবং কাপড় কিনে নিয়ে যান। এমনকি ঢাকার বড় বড় শো-রুমেও শোভা পায় এসব কাপড়।

সাঁওইলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সমস্যা নিয়ে নশরত্পুর ইউনিয়ন তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, হাটের দিন এখানে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর সমাগম ঘটে। বৃষ্টির দিনে হাটের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে যায়। তাই টাঙ্গাইলের করটিয়া হাটের মতো এখানে পাঁচ তলা বিশিষ্ট হাট করে দেওয়া হলে ব্যবসায়ীদের জন্য খুব উপকার হবে। এছাড়া মূল সড়ক থেকে হাটে আসার রাস্তা খুবই সরু, তাই বড় বড় লরী আসতে গেলে খুব সমস্যা হয়ে যায়। এ রাস্তা প্রশস্ত করা দরকার। পাশাপাশি তিনি এখানে একটি কম্বল পল্লী করার দাবী করেন।

হাটের ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই এখানকার মানুষ বছরের পর বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এবং উন্নত প্রযুক্তি পাওয়া গেলে কাপড়ের মান ও ডিজাইন অনেক উন্নত করা যাবে। তিনি আরও বলেন, এখানকার সূতা ডায়িং করানোর জন্য সিরাজগঞ্জ কিংবা নোয়াখালিতে নিয়ে যেতে হয়। গ্যাস না থাকায় কোনো ডায়িং কারখানা এখানে গড়ে উঠছে না। ফার্নেস অয়েল ও বিদ্যুত্ দিয়ে ডায়িং কারখানা চালাতে গেলে অনেক খরচ পড়ে যায়, ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। তাই দ্রুত গ্যাস প্রদান করার দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি এখানকার কাপড় সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বাজারজাতকরণের সুযোগও চান এই ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, এসব ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে সিংগেল ডিজিটে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম ইকবাল বলেন, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এখানকার ঋণগ্রহীতাদের টাকা পরিশোধের পরিমাণ খুবই সন্তোষজনক। তাঁতীরা বলছেন, কম সুদে ঋণ পাওয়ায় মোক্ষম সময়ে কাপড় বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here