বাংলাদেশে উত্পাদিত একটি টি-শার্ট আমেরিকা কেনে ৩ দশমিক ৫২ ডলারে এবং নিজেদের বাজারে বিক্রি করে ১৩ ডলারে। একইভাবে সুইডেন আমাদের কাছ থেকে শূন্য দশমিক ৮৯ ডলারে কিনে বিক্রি করে ৯ ডলারে। নিজস্ব উত্পাদন দক্ষতা এবং গুণগত মানের দিক থেকে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে দেশিয় পোশাক ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বিকেএমইএ ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল ‘বাংলাদেশ নীটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি : রিটেইল ব্র্যান্ডিং, গভার্নেন্স অ্যান্ড মার্কেট ক্রিয়েশন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন। বিকেএমইএ এবং যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউজিএসএন-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় দুটি অধিবেশনে দেশিয় পোশাক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এর বাজার সৃষ্টিতে সরকারি পর্যায়ে করণীয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে বিকেএমইএ এর ১ম সহ-সভাপতি আসলাম সানি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। নীট খাত থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই খাতের আয় ২৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং এটি আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্যানেল আলোচনায় ব্র্যান্ডিং টেকনিক ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে দেশিয় পোশাক ব্র্যান্ডের ভূমিকা তুলে ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও আবরার আনোয়ার বলেন, একটি ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা ভোক্তার দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে কী ঘটছে, সামনের দিনে কী আসছে অর্থাত্ সব পরিস্থিতিতে সময়ের সাথে চলার মানসিকতা রাখতে হবে। সেইসাথে ভোক্তা শ্রেণির চাহিদাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার উপর জোর দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে পোশাক উত্পাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তাই ব্র্যান্ড সৃষ্টির মাধ্যমে পোশাকের রপ্তানি মূল্য কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
এ ধরনের উদ্যোগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল বলেন, এ উদ্যোগ যেন সহজ হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬০ শতাংশ এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা সুবিধা থাকছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুবিধা দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আলোচনার সার-সংক্ষেপে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে ইনোভেশনের কোনো বিকল্প নেই। ব্র্যান্ডিং হলো বাজারে ভোক্তার চাহিদাকে পরিমাপ করে অল্প সময়ে মান সম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা। টেকসই নীট শিল্পের বিকাশে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পক্ষে মত দেন। কর্মশালায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পোশাক ব্র্যান্ড ও নীটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।