চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আগামীকাল শুরু হচ্ছে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) ফোরাম। দু’দিনব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের এই ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে বেইজিংয়ের চায়না ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। এতে ৩০টি দেশের নেতার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। নেতারা এ সময় ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্প বাস্তবায়নে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করতে চীন এ উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে অবকাঠামো খাতে আগামী ৫ বছরে ৬২টি অংশীদার দেশে ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। খবর এনডিটিভি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বাসসের।
২০১৩ সালে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ তুলে ধরেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর থেকে এই উদ্যোগ ঘিরেই চলছে দেশটির অর্থনৈতিক কূটনীতি। এই উদ্যোগ শুরুর পর থেকে বিদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে চীন। সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোডকে সংযুক্ত করে নেয়া এই উদ্যোগের আওতায় এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোকে একটি বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত করতে চাইছে চীন, যার মধ্য দিয়ে কার্যত প্রাচীন সিল্ক রোড রুটকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। উদ্যোগের মূলে অন্যান্য দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের লক্ষ্য রয়েছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গৃহীত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প চলমান রয়েছে। রেল যোগাযোগ, জ্বালানি পাইপলাইন, বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামোর মোট ব্যয় ৪ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেনারেল ইলেকট্রিক, ক্যাটারপিলার ও সিমেন্সের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ওবিওআর প্রকল্পকে ঘিরে আশার আলো দেখছে। মধ্যএশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার তুলনামূলক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেশগুলো এ প্রকল্পের সুবাদে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার আশা করছে।
চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগে এরই মধ্যে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গেল বছরের অক্টোবরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য বাংলাদেশের রয়েছে তা অর্জনে এটা ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ নিয়ে আসবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ। এতে অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি, শিল্প খাতে সহায়তা জোরদার, শ্রমঘন শিল্প ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের দু’দিনের সম্মেলন শেষে অংশগ্রহণকারী নেতারা একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করবেন। এ ঘোষণার খসড়ায় বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার প্রক্রিয়ায় জোরারোপ করা হবে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প চলমান রয়েছে। ক্রেডিট সুইসের হিসাব অনুযায়ী, ওবিওআর প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরে ৬২টি অংশীদার দেশে প্রায় ৫০ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ সঞ্চার করবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ ৩০ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখনও এ সম্মেলনে কাকে পাঠাবে, তা জানায়নি। তবে ভারত ও জাপান সম্মেলনে যাচ্ছে না। তারা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
ফোরামে যোগ দিচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী : এদিকে ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দিতে চীন যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শুক্রবার রাতে চীনের উদ্দেশে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সভাপতি জু সাওশি-এর আমন্ত্রণে শিল্পমন্ত্রী এ ফোরামে যোগ দিচ্ছেন। এতে অংশগ্রহণকারীরা দুর্বল ও অস্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী আন্তঃযোগাযোগ ও গভীর সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।