পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত বছর থেকে সরব হয়েছেন দেশের শ্রমিকনেতারা। গত ডিসেম্বরে আশুলিয়া এলাকার শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে কর্মবিরতি করেন। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই ও মামলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে মালিকপক্ষ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে নতুন করে চাপ আসছে। এই বাজারে শ্রম অধিকার ইস্যুতে পোশাক রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা জিএসপি হুমকির মুখে আছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের সময়সীমা পাঁচ বছর বৃদ্ধি, শিগগিরই নতুন মজুরি বোর্ড গঠন ও শ্রমিক অধিকার রক্ষাসহ বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করতে
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে (ইপি) আলোচনা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির ব্রেন্ড ল্যানজি ও সাজ্জাদ করিম একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে কাল বুধবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। পার্লামেন্টে পাস হলেই এসব বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে চাপ দিতে পারে ইইউ।
গত মাসে ঢাকার অনুষ্ঠিত সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের বৈঠকে ইপির কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নের বিষয়ে অনেক অসংগতি থাকায় অসন্তোষ জানিয়েছিলেন। তারপরই ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রেন্ড ল্যানজি ও সাজ্জাদ করিমের প্রতিবেদনে ১৬টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ইপির নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারকে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার উন্নতি এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রপ্তানিমুখী সব কারখানার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে মালিকদের উদ্যোগী করতে সরকারকে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া শ্রম পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা, পোশাকশিল্পের পাশাপাশি অন্য খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ও শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। সরকারকে শিগগিরই নিম্নতম মজুরি বোর্ড এবং নিয়মিত মজুরি পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকদের শ্রম আইনকে সম্মান করার পাশাপাশি দায়িত্বশীল ব্যবসা করতে হবে। ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের অধীনে কারখানার অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে জটিল ত্রুটি সংশোধন কাজ এখনো পিছিয়ে আছে। তাই আগামী বছরের ১২ মে অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হলেও তা পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিষয়টিকে সমর্থন করতে বাংলাদেশ সরকার ও পোশাকশিল্প মালিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা দেশের আইন অনুসরণ করব। সে ক্ষেত্রে বাইরের চাপ এলে আমরা ক্রেতাদের দাম বাড়াতে বলব। তবে দাম বাড়ানোর বিষয়ে ক্রেতাদের সীমাবদ্ধতা আছে। বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম কিংবা অন্য দেশে পোশাকের দাম কম হলে ক্রেতারা কিন্তু বসে থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইপির নথিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তাহলে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে চাপ দেওয়ার আগে ইপির একটু ভাবনাচিন্তা করা দরকার।
অ্যাকর্ডের বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একতরফাভাবে অ্যাকর্ডের সময়সীমা বাড়াতে পারবে না। এটি বহুপক্ষীয় বিষয়। অ্যাকর্ডের সময় বাড়াতে হলে ইইউ ছাড়াও বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুমতি লাগবে।