বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ‘সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট’ বাস্তবায়ন ইস্যুতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ওঠা প্রস্তাবের ওপর আজ বুধবার ভোট হবে। ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে ইইউ পার্লামেন্টের আজ স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটার (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) কর্মসূচির মধ্যে ওই ভোটের বিষয়টি রয়েছে।
এর আগে গত ১৭ মে ‘সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট’ নিয়ে বিতর্কের পর পার্লামেন্ট সদস্য যুক্তরাজ্যের সাজ্জাদ করিম ও জার্মানির লাঙা বার্নড খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
বিতর্কে অংশ নেওয়া সদস্যরা তৈরি পোশাক শিল্পে নিরাপত্তার মানোন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও আরো অনেক কাজ বাকি বলে উল্লেখ করেন। কয়েকজন সদস্য শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশের ধীরগতির সমালোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের দিকে তাঁরা নজর রাখছেন। প্রয়োজনে বাণিজ্য সুবিধা কাটছাঁটসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ারই সুযোগ আছে।
ওই প্রস্তাবের ১৬ দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ব্যবসার দায়িত্ব মূলত অভ্যন্তরীণ। আরো টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত।
প্রস্তাবের দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সরকারকে পোশাক শিল্পের কর্মীদের সুরক্ষা ও কাজের পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান রয়েছে।
তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালের শ্রম আইন সংশোধন করে সংগঠন করার স্বাধীনতা ও সম্মিলিতভাবে দরকষাকষির সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দ্রুত নিবন্ধন প্রদান, সংগঠনবিরোধী তত্পরতা ও বৈষম্য দূর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাগুলোতে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবের চতুর্থ দফায় বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর সব পোশাক কারখানা মালিক, পোশাক শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ সরকারকে কারখানার ত্রুটি সারানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম দফায় বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম, মজুরি বোর্ড গঠন এবং স্বল্প সময়ের বিরতিতে মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ষষ্ঠ দফায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে এ দেশের পোশাক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার, করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং দায়িত্বশীল ব্যবসা চর্চার আহ্বান রয়েছে।
সপ্তম দফায় বাংলাদেশে আগামী বছরের ১২ মে শেষ হতে যাওয়া অ্যাকর্ডের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবের অষ্টম দফায় বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি খাতকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবের নবম থেকে ত্রয়োদশ দফায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্বীকার করা হয়েছে। ত্রয়োদশ দফায় ইইউ জোর দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং উগ্রবাদীদের ঝুঁকি ধারাবাহিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
চতুর্দশ দফায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য পোশাক শিল্প খাতের উন্নতমানের ওপর জোর দিয়েছে। পঞ্চদশ অনুচ্ছেদে পোশাক শিল্পে দায়িত্বশীল আচরণ ও সার্বিক লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় বেসরকারি খাত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের দায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
ষষ্ঠদশ অনুচ্ছেদে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রস্তাবের অনুলিপি বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় সংসদ, ইউরোপীয় কাউন্সিল, ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট/ইউনিয়নের নিরাপত্তা নীতি ও পররাষ্ট্রবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার ও সংসদ, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এবং আইএলও মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।