গত বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রামে চালু তৈরি পোশাক কারখানা ছিল ৪২৪টি। কিন্তু চলতি মে মাসে চট্টগ্রামে চালু কারখানা নেমে এসেছে ৩৬৯টিতে।
অর্থাৎ গত ১১ মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক কারখানা কমেছে ৫৫টি। তবে এটাই শেষ নয়, ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের আরো ১৯৫টি কারখানা আছে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে। এর মধ্যে অনেকটি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ নেতারা। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে টিকতে না পেরে এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে বিজিএমইএ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
বিজিএমইএ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ হওয়া ৫৫ কারখানার মধ্যে ১৪টি বন্ধ হয়েছে গত বছরের শেষার্ধ্বে। বাকি ৪১টি চলতি জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে আম্বিয়া ফ্যাশনস, অ্যাম্পল ফ্যাশন, এরিস ফ্যাশন, বিএসএ ফ্যাশন, বায়েজিদ অ্যাপারেলস, চিটাগং ফ্যাশন ওয়্যার, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস অ্যাপারেলস, গারল্যান্ড ফ্যাশন, গাউস ফ্যাশন, ইফকো গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, জিন্স এক্সপ্রেস, জারকিন ওয়্যার, নিটেক্স অ্যাপারেলস, লাক্স লিঙ্গারি, এশিয়ান অ্যাপারেলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই কারখানাগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ হয়েছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নির্দেশিত শর্তপূরণ করতে না পেরে। কারখানা মালিকরা জানান, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপের বায়ারদের সংগঠন ‘অ্যাকর্ড’ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ার সংগঠন ‘অ্যালায়েন্স’ ভবন, অগ্নি, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত যে কমপ্লায়েন্স গাইডেন্স দিয়েছে, তা প্রতিপালনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কোটি কোটি টাকার এই সংস্কার কার্যক্রম চালানোর মতো আর্থিক সংগতি অনেক কারখানা মালিকেরই ছিল না। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যাপারেও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বারবার সরকারের প্রতি আহ্বান জানালেও সেভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন অনেক পোশাক ব্যবসায়ী।
তবে বন্ধের তালিকায় আগামী এক বছরে আরো অনেক কারখানা যুক্ত হবে আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স মূলত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বায়ারদের সঙ্গে কাজ করে—এমন গার্মেন্ট কারখানার কমপ্লায়েন্স নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু এর বাইরে অর্থাৎ আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে যারা কাজ করছে তারা এ দুই সংগঠনের বাইরে। এ ধরনের কারখানার কমপ্লায়েন্স কার্যক্রম দেখভাল করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলওর নেতৃত্বে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ। ‘ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ’ নামের এই পরিদর্শন প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের এক হাজার ৫৪৯টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কারখানাগুলোর বেশির ভাগ ছোট ও মাঝারি। আইএলও, শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ যৌথভাবে এই কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স কার্যক্রম প্রত্যয়ন করবে। এর মধ্যে বিজিএমইএ তালিকায় চট্টগ্রামে রয়েছে ১৯৫টি কারখানা। কিন্তু ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমের আওতায় থাকা সারা দেশের কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ খুব বেশি এগোয়নি। কিন্তু সংস্কারকাজ আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। ফলে এই কারখানাগুলো থেকেও অন্তত অর্ধেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএর নেতারা।
বিজিএমইএ পরিচালক এবং লেবার অ্যান্ড ফায়ার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক আ ন ম সাইফুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের আওতায় সংস্কার কার্যক্রমের মাত্র ২০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। কিন্তু আগামী এক বছরের মধ্যে সব কারখানার কাজ শেষ করা কঠিন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো বেশি ঝুঁকিতে। কারণ এই কার্যক্রমের আওতায় থাকা চট্টগ্রামের বেশির ভাগ কারখানা ভবন ভাগাভাগি করেছে, যা বর্তমান কমপ্লায়েন্স আইন কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কিন্তু চট্টগ্রামে জমির অভাবে মালিকরা চাইলেও কারখানা সরাতে পারছেন না। আবার অনেক সময় ভবন মালিকও সহযোগিতা করছেন না। ’
বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি মাঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, ‘রানা প্লাজা ঘটনার পর কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে সারা দেশে ইতিমধ্যে এক হাজার ২৫০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের আওতায় আরো এক হাজার ৫৪৯টি কারখানা খুবই ঝুঁকিতে আছে। এই কারখানাগুলোর বেশির ভাগ ছোট ও মাঝারি হওয়ায় তারা সংস্কারকাজ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যেও পড়েছে। আমরা চাই না সবচেয়ে ছোট কারখানাটিও বন্ধ হোক। কিন্তু এ জন্য আর্থিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক থেকে কিংবা আলাদা ফান্ড করে স্বল্প সুদে এই কারখানাগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে। ’