বাংলাদশের রপ্তারি আয়ের ৮০ ভাগই আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। কিন্তু র্দীঘদিন ধরে এই খাত আন্তর্জাতিক প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতির চাপের মুখে আছে। সব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য তৈরি পোশাক শিল্পবান্ধব বাজেট চেয়েছিলেন ওই শিল্পের মালিকেরা। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পরপরই বিজিএমইএ‘র নেতারা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট পোশাক শিল্প বান্ধব নয়। যে কোন সময় এ খাতে বড় সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কোনো কারণে পোশাকশিল্প হোঁচট খেলে অনেক শ্রমিক নিশ্চিতভাবেই কর্মসংস্থান হারাবেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি তাতে এই বাজেটকে তৈরি পোশাক শিল্পবান্ধব বলে বলতে পারছি না। তবে এখনও অনেক সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে অর্থমন্ত্রী যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দাবি রক্ষা করেন; তখন বলতে পারবো, এই বাজেট পোশাক শিল্পবান্ধব।
জানা যায়, পোশাক শিল্পকে বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। ইউরোর দরপতন, বেক্সিট এবং গ্যাস সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে এই খাতে উৎপাদন ব্যয় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আমরা আশানুরূপ ফল পায়নি বাংলাদেশের পোশাক মালিকেরা। গত ১০ মাসে নতুন বাজারে রপ্তানি প্রবৃৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ২১ শতাংশ। কয়েক বছর আগে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ ছিল। এ হিসাবে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের মতো কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে যদি তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তন না আনা হয় তাহলে প্রবৃদ্ধির হার আরো কমার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পেরে আর্ন্তজাতিক বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও জাপানের বাজারে অন্ুপ্রবেশ করতে পারছে না বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাজারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এদিকে ভিয়েতনাম ও ভারত বাজার দখল করে নিচ্ছে।
সূত্র মতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও ব্যাংক সুদের হার বেশি হওয়ায় শিল্পে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। উদ্বেগের বিষয়, গত চার বছরে সক্ষমতা হারিয়ে ১ হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনের পর অনেক কারখানা আংশিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মালিকদের আশানুরুপ পোশাক শিল্পবান্ধব না হওয়ায় আরো নতুন করে অনেক কারখানা বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। সক্ষমতা হারিয়ে এ সব কারখানা বন্ধ হবে বলে তারা জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটের আগে বিজিএমইএ‘র সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সময়কে পোশাকশিল্পের জন্য ‘সংকটময়’ উল্লেখ করে আগামী দুই বছরের জন্য পোশাক রপ্তানির ওপর ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার পাশাপাশি আগামী দুই বছর উৎসে কর সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি এবং করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ করার দাবি জানায় বিজিএমইএ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এতে পোশাক শিল্প মালিকদের প্রধান তিনটি দাবির কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। বাজেটে এ খাতের কর হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎসে কর ১ শতাংশ হারে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন মুহিত। আর নগদ সহায়তার বিষয়টি বাজেটের প্রস্তাবনার মধ্যেই নেই।
এই বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের কয়েকজন মালিক বলেন. যদি ১ শতাংশ হারে উৎসে কর বাস্তবায়িত হয় তাহলে রফতানিমুখি শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, বিনিয়োগ তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিতভাবে ক্রমাগত নিরুৎসাহিত হয়ে উঠবে। এতে করে অনেক মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নেবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাজারেও খারাপ সময় যাচ্ছে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও ভারত বাজার দখল করে নিচ্ছে। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য সব নীতি ও কৌশল পাঁচ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। যদি এ সব বিষয়ে সরকার এখনই উদ্যোগ না নেয় তাহলে এ শিল্পের সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। বরং সংকট আরো প্রকট আকারে বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নে একদিকে সম্ভাবনা যেমন আছে, বিপরীতে আছে বিরাজমান কঠিন বাস্তবতা। বাজেটে শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপগুলো নেয়া হলেও তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশের পথে নিরুৎসাহিতকরণ পদক্ষেপও রয়েছে। তিনি বলেন, বিস্ময়ের ব্যাপার হলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে রফতানি খাতের উৎসে কর বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নাই।