‘কর্মসংস্থান বাড়াতে রপ্তানি ও শিল্পের বহুমুখীকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ এ দেশে শিল্পের জন্য সরকারের নীতিসহায়তার সবই তৈরি পোশাকশিল্পকেন্দ্রিক। এবারের বাজেটেও তৈরি পোশাকশিল্পের করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। অথচ অন্য কোনো শিল্প এ ধরনের সুযোগ পেল না? তাহলে কীভাবে অন্য শিল্প বিকশিত হবে বা অন্য খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন? আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় জুতার ব্যবসা ছেড়ে তৈরি পোশাকের ব্যবসা শুরু করি।’
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) আয়োজিত কর্মসংস্থান–বিষয়ক এক কর্মশালায় এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রো চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল সোমবার সকালে ‘বাংলাদেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার প্রথম পর্বে ছিল উদ্বোধনী আলোচনা। দ্বিতীয় ও সমাপনী পর্বে ছিল প্যানেল আলোচনা।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, রপ্তানি বাড়াতে সরকার পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলে কিন্তু সরকার কেবল তৈরি পোশাকশিল্পকেই নানা ধরনের সুবিধা দেয়। কারণ, ওই খাতের সুবিধা আদায়ে শক্তিশালী লবিস্ট মহল রয়েছে। কর্মশালার মূল প্রবন্ধ ও প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা কর্মসংস্থান বাড়াতে পোশাকশিল্পের বাইরে অন্যান্য শিল্পের বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেন।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসার নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বলেন, ব্যবসার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। উচ্চ কর হার, ব্যবসার নানামুখী খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ব্যবসায় মুনাফার হার দিনকে দিন কমছে। এ অবস্থায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী হবেন না। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসার ব্যয় কমাতে হবে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের বক্তব্যের সূত্র ধরে কর্মশালার প্রধান অতিথি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম বলেন, এ অঞ্চলের ও প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট কর হার বেশি, এ কথা সত্য। তিনি বলেন, ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে উদ্ভাবনের কোনো বিকল্প নেই। উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য রান আইএলওর এ দেশীয় পরিচালক শ্রীনিবাস রেড্ডি ও বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী এস পারালকার। কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ থমাস ফারোল ও ইয়ুনইয়াং চো।
শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, শুধু কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এখন একমাত্র প্রত্যাশা নয়। মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, যেখানে উন্নত কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা রয়েছে। রাজশ্রী এস পারালকার বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শুধু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালক ছিলেন বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। এ সময় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়েনি।
প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাকশিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই খাতে কর্মসংস্থান বাড়েনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সল আহমেদ ও বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ।