পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের সাত কোম্পানির শেয়ারের দাম গায়ের দরের (ফেসভ্যালু) চেয়েও নিচে নেমে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে এ কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তাছাড়া এ খাতের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও কম। যা এ খাতের বিনিয়োগকারীদেরকে শঙ্কিত করে তুলছে।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, পোশাক খাত একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চাপের ফলে অনেক কারখানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। সংকট থাকলেও দফায় দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের। এ অবস্থায় উত্স কর ১ শতাংশ করা হলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মধ্যে পড়বে। তাই অন্তত দুই বছরের জন্য এ কর প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি ন্যায্য দামে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির ব্যবস্থা করা না হলে এ খাতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের ঢাকা ডায়িং, দুলামিয়া কটন, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, সিএন্ডএ টেক্সটাইল, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস এবং মোট্রো স্পিনিং মিলের শেয়ারের দাম ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। যেখানে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকা। আর ডেল্টা স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস এবং তাল্লু স্পিনিংয়ের শেয়ারের দাম ফেসভ্যালুর কাছাকাছি অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ প্রান্তিকে মুনাফা করলেও সিএনএ টেক্সটাইলের উত্পাদন কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির পোশাক উত্পাদন অংশে অ্যাকর্ড-এলায়েন্সের শর্ত পূরণ করতে না পারায় কাজ পাচ্ছে না। তাছাড়া গ্যাস সংকটও উত্পাদন বন্ধের একটি কারণ বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ডায়িংয়েরও গ্যাস সংকট রয়েছে। ফলে কোম্পনিটির ডায়িং সেকশন বন্ধ রয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোতেও গ্যাস সংকট তীব্র। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ায় শেয়ার বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক কমে গেলেও তৈরি পোশাক খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম দিন দিন বাড়ছে। কোম্পানিগুলোর রপ্তানি আয় বাড়ায় এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন সম্পদ ব্যবস্থাপকরা।
মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, পোশাক খাতের উপর সরকার এবার এ খাতের কোম্পানিগুলোর উপর ১ শতাংশ হারে সোর্স ট্যাক্স (উেস কর) আরোপ করেছে। যা এ খাতের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তার উপর গ্যাস সংকট বস্ত্র খাতকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া এ খাতের রপ্তানি আয়ও লক্ষ্য অনুযায়ী বাড়ছে না। তাই সরকারের উচিত হবে এ খাতের জন্য সোর্স ট্যাক্স আরোপে কিছুটা ছাড় দেওয়া। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২ হাজার ৫৬২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছর এই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাত্ পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সাড়ে ছয় শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই এমন অবস্থা চলে আসছে। এ খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।